গোলের পর এনদ্রিকের গর্জন। আজ লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে | এক্স

⚪️ইংল্যান্ড ০ : ১ ব্রাজিল🔵

খেলা ডেস্ক: লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে খেলতে নামা অনেক ফুটবলারের কাছে স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার। সেই স্বপ্ন পূরণের রাতে কেউ যদি দেশের হয়ে নিজের প্রথম গোলটা পেয়ে যান, তাঁকে কী বলবেন? বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ!

এনদ্রিককে জিজ্ঞেস করে দেখুন না, হয়তো তা–ই বলবেন। ‘বিস্ময়–বালক’ পরিচিতি পাওয়া এই ফরোয়ার্ড আজ নিয়ে তৃতীয়বার ব্রাজিলের জার্সিতে খেলতে নেমেছেন, ওয়েম্বলিতে প্রথমবার। ম্যাচের ৭১ মিনিটে বদলি নামার ৯ মিনিট পরেই পেয়ে গেলেন প্রথম গোল। তাঁর গোলেই ইংল্যান্ডকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে দিল ব্রাজিল। তাতে দলটির নতুন কোচ দরিভাল জুনিয়রের শুরুটাও হলো রঙিন।   

এনদ্রিককে কেন ভবিষ্যতের বড় তারকা মনে করা হচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদ কেন তাঁকে ২০২২ সালেই কিনে রেখেছে—ব্রাজিলকে জিতিয়ে যেন নিজের জাত আরেকবার চিনিয়ে রাখলেন।

১৭ বছর ৮ মাস ২ দিন বয়সী এনদ্রিকই এখন একবিংশ শতাব্দীতে ব্রাজিলের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা, সব মিলিয়ে চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ। তাঁর ওপরে আছেন ‘ফুটবলের রাজা’ পেলে, এদু এবং রোনালদো ‘দ্য ফেনোমেনন’। তবে একটা জায়গায় এনদ্রিক আজ সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ওয়েম্বলিতে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করা খেলোয়াড় এখন তিনিই। তাঁর এই গোলটা ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডকে ২০ ম্যাচ পর হারের তেতো স্বাদ দিয়েছে।

২০০৯ সালের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই ব্রাজিলের প্রথম জয়। প্রায় ১৫ বছর আগের জয়টাও এসেছিল ১–০ ব্যবধানে, আজকের মতো সেটাও ছিল আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ। কাতারের আল রাইয়ানে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে গোল করেছিলেন নিলমার।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর থেকে প্রায় ১৩ মাস অন্তবর্তীকালীন কোচ দিয়ে কাজ চালিয়েছে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)। এ সময়ে কোচের দায়িত্ব পালন করা রামন মেনেজেস ও ফার্নান্দো দিনিজের কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।

দিনিজের অধীনে সর্বশেষ ৩ ম্যাচেই হেরে যায় ব্রাজিল। ৩টি ম্যাচই আবার ছিল ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের। ওই ৩ হারে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের (কনমেবল) বাছাইয়ের পয়েন্ট তালিকার ছয়ে নেমে যায় রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

অবশেষে গত জানুয়ারিতে দরিভালকে স্থায়ী কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় সিবিএফ। দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় আড়াই মাস পর তাঁর অধীনে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই সুখস্মৃতি নিয়ে মাঠ ছাড়ল ব্রাজিল। 

অথচ এ ম্যাচে ইংল্যান্ডকেই ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল। ইংলিশরা ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিলিয়ানদের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে, সর্বশেষ ১০ ম্যাচে ছিল অপরাজিত, খেলাটাও তাদের ঘরের মাঠে। এর সঙ্গে বাড়তি সুবিধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্রাজিলের মূল দলের অন্তত ৬ খেলোয়াড়ের চোট। 

প্রাণভোমরা নেইমার ও প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক আলিসন বেকার অনেক দিন হলো মাঠের বাইরে। তাঁদের বাদ দিয়েই দরিভাল যে দলটা দিয়েছিলেন, সেখান থেকে একে–একে ছিটকে যান আরও চারজন—দ্বিতীয় পছন্দের গোলকিপার এদেরসন, ডিফেন্ডার মার্কিনিওস, ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ও সর্বশেষ তারকা মিডফিল্ডার কাসেমিরো। তবে অপেক্ষাকৃত তরুণ দলটাই নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

ইংল্যান্ডও অবশ্য এ ম্যাচে চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক হ্যারি কেইন, ফরোয়ার্ড বুকায়ো সাকাকে পায়নি। দলকে নেতৃত্ব দিতে নামা কাইল ওয়াকারও ম্যাচের ২০ মিনিটে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। তাঁর বদলি নামতেই ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক হয় এজরি কোনসার। নিউক্যাসলের ফরোয়ার্ড অ্যান্থনি গর্ডনেরও আজ অভিষেক হয়েছে। ব্রাজিলের জার্সিতে প্রথমবার খেলতে নেমেছেন সাত–সাতজন—গোলকিপার বেন্তো, দুই মিডফিল্ডার জোয়াও গোমেজ ও পাবলো মাইয়া, দুই সেন্টার ব্যাক ফাব্রিসিও ব্রুনো ও লুকাস বেলার্দো, লেফ্‌ট ব্যাক ওয়েনদেল আর ফরোয়ার্ড সাভিও।

ব্রাজিল অবশ্য আরও আগেই জয়সূচক গোল পেতে পারত কিংবা জিততে পারত আরও বড় ব্যবধানে। ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, রাফিনিয়াদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ ম্যাচের শুরু থেকেই ইংলিশ রক্ষণভাগের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে। ইংল্যান্ড শুধু বল দখলেই যা একটু এগিয়ে ছিল। ব্রাজিলের ৪৭ শতাংশের বিপরীতে তাদের ৫৩ শতাংশ। তবে লক্ষ্যে শট নেওয়া, গোলের বড় সুযোগ সৃষ্টি করায় ব্রাজিলিয়ানরাই দাপট দেখিয়েছে। কিন্তু ভিনি–রদ্রিগোরা একাধিকবার ইংলিশ গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ডকে একা পেয়েও ‘ফিনিশিং টাচ’ দিতে পারেননি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ভাগ্যেরও দায় আছে। নয় তো কি আর লুকাস পাকেতার শটটা পোস্টে লেগে ফেরে!

ইংল্যান্ডের ফিল ফোডেন, জুড বেলিংহামরাও বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেন। সেগুলোও সাফল্যের মুখ দেখেনি। বেন চিলওয়েল তো একাধিকবার ফাঁকায় বল পেয়েও উড়িয়ে মেরেছেন।

ম্যাচজুড়ে এতগুলো সুযোগ হাতছাড়ার মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটা আসে ৮০ মিনিটে। আন্দ্রেয়াস পেরেরার থ্রু বল ধরে ছুটতে থাকেন ভিনিসিয়ুস। জন স্টোনসকে ফাঁকি দেওয়ার পর তাঁর সামনে পড়েন গোলকিপার পিকফোর্ড। কাছকাছি দূরত্ব থেকেই শট নেন ভিনি। তবে পিকফোর্ড তা রুখে দিলে বল চলে যায় পাশে থাকা এনদ্রিকের কাছে। মৌসুম শেষে পালমেইরাস ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাওয়া এ তরুণ ইংল্যান্ডের জাল কাঁপাতে ভুল করেননি।