রাজশাহীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সৎভাই-ভাবিসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম এলাকায় নির্মাণাধীন একটি বাড়ি থেকে সন্ধ্যা রানী (২০) নামের এক তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেছে। বুধবার সকালে স্থানীয় লোকজন লাশের বিষয়ে জানতে পেরে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি ঘিরে রাখে। দুপুর পর্যন্ত লাশটি সেখানেই ছিল। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) লোকজন যাওয়ার পর লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত তরুণীর সৎভাই-ভাবিসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত সন্ধ্যা রানী গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শীশা বাঁশপীর গ্রামের হরিলালের মেয়ে। তিনি রাজশাহীর কর্ণহার থানা এলাকায় সৎভাই ফুলবাবু রবিদাস ওরফে বাবুর (২২) বাসায় থাকতেন। এ ঘটনায় বাবুসহ তাঁর স্ত্রী মিনতি রানী (১৯) ও আদিল আহমেদ (১৯) নামের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। আদিল গোদাগাড়ীর লালপুকুর গ্রামের আওয়াল হোসেনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, আজ সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে গোদাগাড়ীর গোগ্রাম এলাকার নির্মাণাধীন বাড়িতে যান। ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে সিআইডি দল লাশটি উদ্ধার করে আলামত সংগ্রহ করে। দুপুর পর্যন্ত তরুণীর পরিচয় পায়নি পুলিশ। সুরতহালে তরুণীর পেট ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সিআইডি নিহত তরুণীর হাতে একটি মুঠোফোন পায়। পরে মুঠোফোনের সূত্র ধরে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, সন্ধ্যা রানী কর্ণহার থানা এলাকায় সৎভাই ফুলবাবুর বাসায় থাকতেন। তাঁদের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে বিবাদ চলছিল। তাঁরা সন্ধ্যাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সন্ধ্যাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ফুলবাবুর বন্ধু আদিলের সহযোগিতায় ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন। পরে নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিকেলে তিনজনকে আটক করা হয়। অভিযুক্ত আদিলের দেখানো জায়গা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি জব্দ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ওই পরিবারের সদস্যসহ আদিল ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সন্ধ্যা রানী সেখানকার একটি ছেলেকে পছন্দ করতেন। সেটা ভালোভাবে নেননি সৎভাইসহ স্বজনেরা। সেখানে একটি অপরাধ করেন তাঁরা। সম্প্রতি সন্ধ্যা রানীকে সৎভাইয়ের পরিচিত একজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে পরিবার। কিন্তু সন্ধ্যা রানী বিয়েতে সায় দেননি। তিনি স্বজনদের হুমকি দেন, অন্য কোথাও বিয়ে দিলে ঢাকার ঘটনা পুলিশকে বলে দেবেন। তখন স্বজনেরা শঙ্কিত হয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশের ওই সূত্র বলছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নগরের হড়গ্রাম এলাকায় একটি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে একটি কাটার ও আরেকটি দোকান থেকে ৬৫ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কেনেন। পরে তাঁরা ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা ভাড়া করে গোদাগাড়ীতে যান। গোগ্রামের এলাকাটি আদিলের পরিচিত। তাঁর পরামর্শে নির্মাণাধীন ভবনে এনে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। পরে তিনজন মিলে তাঁকে হত্যা করেন। ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি নালা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি জব্দ করে পুলিশ।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, তাঁদের মধ্যে গোপনীয় অপরাধের বিষয় ছিল, যা নিহত সন্ধ্যা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। ঘটনা প্রকাশ পেলে আসামিদের ক্ষতি হতে পারে, এ শঙ্কা থেকেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁরা তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর মামলার বাদী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা সুন্দরগঞ্জ থানায় খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ভয়ে নিহত তরুণীর বাবাও পালিয়েছেন। এখন পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ও গণমাধ্যম মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। একেবারেই ক্লুলেস ছিল। পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে পেরেছে।’