রাজশাহীর বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে ‘প্রতারক’ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কলেজের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারণার কারণে ৪২ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তাঁরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। কিন্তু ভর্তির দুই বছর পার হলে তাঁরা জানতে পারেন, কলেজটির বিএমডিসির কর্তৃক অনুমোদন নেই। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তও নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভুয়া ও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জিল্লার রহমান এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলনে শঙ্কা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তাঁরা চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবসায়ী প্রতারক মনিরুজ্জামান ও জিল্লার রহমানের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আর্থিক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ৪২ শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পথে। এ বিষয়ে তাঁরা আদালতে পৃথক ২১টি মামলা করেছেন। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। শিক্ষাজীবন রক্ষায় অতি দ্রুত নবায়নযুক্ত কোনো মেডিকেলে মাইগ্রেশনের দাবি জানান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী ইশতিয়াকুল হাসান, সাদিয়া আফরিন, মহুয়া খাতুন, সাকেরাতুল মাহজুবাসহ ৪২ জন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাঁদের অভিভাবকেরাও উপস্থিত ছিলেন। এর আগেও শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত নয়টি ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) নিবন্ধিত হতে পারেনি। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠানটিকে অধিভুক্ত করেনি। এতে প্রথম থেকে সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশন নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন। এই শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি একরকম বন্ধ হয়েই পড়ে ছিল। পরে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জিল্লার রহমান। ‘সব সমস্যা কেটে গেছে’ জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আবার অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে। একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবকে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেখে শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে শুরু করেন। এভাবে পরের বছর নবম ব্যাচেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য জিল্লার রহমানের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি ধরেননি। পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, তিনি সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে অবগত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচিগুলো করছেন। শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
মনিরুজ্জামান পরবর্তী সময়ে হোয়াটসঅ্যাপে শিক্ষার্থীদের একটি বক্তব্য পাঠান। সেখানে তিনি দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় জেনেবুঝেই ভর্তি হয়েছেন। এখানে প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই। বেসরকারি কোনো মেডিকেল কলেজেরই রেজিস্ট্রেশন বা মাইগ্রেশন দেওয়ার ক্ষমতা নেই। রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর যেকোনো শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মতি সাপেক্ষে যেকোনো পছন্দের কলেজে মাইগ্রেশন নিতে পারবেন। এতে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই।