পাইকারি ক্রেতা না থাকায় কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। আজ সকালে সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বেড়া: মাস দেড়েক আগেও পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় ৬০-৭০ টাকা দরে প্রতিটি লাউ বিক্রি হয়েছে। এখন কৃষকেরা এই লাউ হাটে নিয়ে তিন-চার টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না।

বেগুনের দাম আরও কম। মাস দেড়েক আগে যে বেগুন ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এখন এর ক্রেতা নেই বললেই চলে। বর্তমানে কৃষকেরা প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি করে দেড় থেকে দুই টাকা দরে বিক্রি করতে কৃষকদের হিমশিম খাচ্ছেন। কখনো কখনো ক্রেতা না পেয়ে হাটে বেগুন ফেলে রেখেও যাচ্ছেন তাঁরা।

শুধু লাউ বা বেগুনই নয়, করলা, টমেটোসহ বেশির ভাগ সবজিই এখন কৃষকদের হাটে নিয়ে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। কোনো কোনো কৃষক সবজি বিক্রি করতে না পেরে হাটেই তা ফেলে আসছেন। এ অবস্থায় অনেক কৃষকের সবজি খেতেই নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন খরচ না ওঠায় হা-হুতাশ করছেন কৃষকেরা।

এ সম্পর্কে  বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের শীতে মুলা, শিম, কপি আবাদ কইর‌্যা ধরা খাইছি। ভাবছিল্যাম লাউ, বেগুনে সেই ক্ষতি কিছুটা পোষায়া নেব। কিন্তু এগুল্যা আবাদ কইর‌্যা লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই তুলব্যার পারতেছি না।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজান শুরু হওয়ার আগেই মুলা ও পেঁয়াজকলির দাম একেবারেই পড়ে যায়। কৃষকেরা তখন হাটে এনে বিক্রি করতে না পেরে ওই দুটি সবজি বাজারে ফেলে দিয়ে গেছেন। একপর্যায়ে পরিবহন খরচও না ওঠায় কৃষকেরা তা হাটে আনা বাদ দিয়ে দেন।

কৃষকেরা লাউ হাটে নিয়ে তিন-চার টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না। আজ সকালে সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এদিকে রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে কমতে থাকে লাউ ও বেগুনের দাম। কৃষকেরা বেগুন হাটে এনে কেজি দরের পরিবর্তে এখন বস্তা (প্রতি বস্তা ৪০ কেজি) হিসেবে বিক্রি করছেন। প্রতি বস্তা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এতে প্রতি কেজি বেগুনের দাম পড়ছে দুই থেকে তিনি টাকা। কখনো কখনো এমন দামেও কৃষকেরা বেগুন বিক্রি করতে না পেরে হাটে তা ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন। লাউয়ের অবস্থাও অনেকটা একই রকমের। কৃষকেরা হাটে লাউ নিয়ে এসে প্রতিটি তিন-চার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, পরিবহন খরচই উঠছে না। এ ছাড়া কৃষকদের ৫–৬ টাকা কেজি করলা, ২০ টাকা কেজি টমেটো, ৩০-৪০ টাকা কেজি পটোল, ৪৫-৫৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে সবজি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না বলে কৃষকেরা জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাট ও কাশিনাথপুর হাট ঘুরে দেখা যায়, লাউ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি প্রচুর উঠেছে। এসব সবজির ক্রেতা খুব কম। সবজি বেচাকেনা না হওয়ায় বেশির ভাগ কৃষকের মুখে হাসি নেই।

করমজা চতুরহাটে দুই বস্তা বেগুন নিয়ে এসেছিলেন সাঁথিয়া উপজেলার শহীদনগর গ্রামের রজব আলী। তিনি বলেন, হাটে নিয়ে আসতে দুই বস্তা বেগুনের ভ্যানভাড়া লেগেছে ১২০ টাকা। এর ওপর আবার যাওয়ার খরচও আছে। হাটে দুই বস্তা বেগুনের দাম উঠেছে মাত্র ১৫০ টাকা। এই দামে বেগুন বিক্রি করে কোনো রকমে যাওয়া-আসার খরচ শুধু উঠবে।

বেড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন ও বেংকু মিয়া জানান, সবজির চাহিদা একেবারেই পড়ে গেছে। কৃষকেরা হাটে সবজি এনে দাম না পাওয়ায় হা-হুতাশ করছেন। কোনো কোনো অবিক্রীত সবজি কৃষকেরা হাটে ফেলে রেখে যেতেও বাধ্য হচ্ছেন।