বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের গণকপাড়া জয়বাংলা চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদকে যে জায়গায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, মিলাদ দিয়ে সেই জায়গা ‘পবিত্র করার’ ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ঈদের পরেই ‘মাওলানাদের ডেকে এনে, দোয়া-কালাম পড়িয়ে কলুষিত ওই স্থানকে পবিত্র’ করতে চান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের গণকপাড়াসংলগ্ন জয়বাংলা চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় এই ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে এই সভা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।
প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদকে ৯ মার্চ নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানও রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজন করা হয়। দলের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন। সভাপতিত্ব করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
আরও পড়ুন- প্রতিমন্ত্রী ওয়াদুদের সংবর্ধনা সভায় এক ব্যক্তির হাত থেকে রাজশাহীকে ‘মুক্ত’ ঘোষণা
অনুষ্ঠানের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দিতে উঠেই বলেন, ‘আজ থেকে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ মুক্ত বলে ঘোষণা করা হলো। রাজশাহীর আকাশে যে অমাবস্যা ছিল, সব সময়ই অমাবস্যা, সব সময়ই সূর্যগ্রহণ, আজকে থেকে আর কোনো সূর্যগ্রহণ রাজশাহীর আকাশে কাজ করবে না। আমরা করতে দেব না। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিক। আমরা আওয়ামী লীগকে সমস্ত রকম অন্যায়–অবিচার থেকে মুক্ত ঘোষণা করলাম।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে ‘সমস্ত রকম অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্ত’ ঘোষণা করেন। ওই সভায় বেশির ভাগ বক্তার বক্তব্যে সিটি মেয়র এ এইচ খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ পায়। যদিও কেউ তাঁর নাম উচ্চারণ করেননি। আজকের আলোচনা সভায় এসবের জবাব দিয়েছেন নেতারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুজ্জামান বলেন, ‘একজন (প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ) কিছু একটা হয়ে গেছেন, তাঁকে সংবর্ধনা দিতেই পারেন। লোক ভাড়া করে আনা হলো, সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণটিকে কলুষিত করা হলো। সংগঠনের নামে আমরা দেখলাম অন্যকে গালাগালি করে ছোট করার অপপ্রয়াস করা হলো।’ ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে খায়রুজ্জামান বলেন, ‘দেখলাম, সেই মঞ্চে যার গায়ে ছাত্রদলের গন্ধ, যার গায়ে ফ্রিডম পার্টির গন্ধ, যার পরিবারে এখনো স্বাধীনতার বিপক্ষের মানুষের চলাচল আছে, যার নিজের এলাকায় তাঁকে গডফাদার বলা হয়, কিসের গডফাদার আমি সেটা বলতে চাই না। তিনি (ওমর ফারুক) ঘোষণা করলেন, ‘‘রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।” আরে উনি তো নিজেই ছাত্রদল ফ্রিডম পার্টি করে এসেছেন, উনি আবার আওয়ামী লীগকে রাহুমুক্ত করবেন কীভাবে! আমরা জন্মগতভাবে রক্তের মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগ করি।’
খায়রুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, বড় মসজিদ প্রাঙ্গণকে কলুষিত করায় সেখানে মিলাদ দিয়ে পবিত্র করা দরকার। আমরা সেটা করতে চাই। ঈদের পরেই আমরা সেখানে ইসলামি জলসা দিয়ে মাওলানাদের ডেকে এনে, দোয়া-কালাম পড়িয়ে পবিত্র করতে চাই। কারণ, কিছু রাজাকার, কিছু বিএনপি, জনগণের ভোটে তারা কতটুকু এগিয়ে আছেন, আমি সে প্রশ্নে যাব না। তাঁরা ওখানে বড় বড় কথা বলে আমাকে, আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।’
সভায় রাজশাহী মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ৯ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে কিছু রাজাকারশাবক রাজশাহীকে অশান্ত করতে এসেছিল। তারা খায়রুজ্জামান লিটনের পায়ের নিচে বসে নেতা হয়েছে। যারা কয়দিন আগে জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছে, তারা এখন নোংরা কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক। রাজাকারশাবকদের বলব, যদি সাহস থাকে, ক্ষমতা থাকে কোথায় সমাবেশ করবেন জানাবেন। সেখানে গিয়ে ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই আপনাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাই।’
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ‘লিটনকে ছোট করে কেউ যদি মনে করেন বড় হবেন, তাহলে তিনি আহাম্মক। এখন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের উৎখাত করব।’ রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনসুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এনামুল হক বলেন, ‘গাছের থেকে পরগাছা বড় হয়ে গেছে। তারা মূল গাছ সম্পর্কে কটু কথা বলছেন। তাঁদের বলব শিষ্টাচার মেনে রাজনীতি করুন নইলে পালাবার জায়গা পাবেন না।’ তিনি ‘আগাছা’ দূর করে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি করার অনুরোধ জানান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘বাংলার মাটিতেই মিরজাফর-মোশতাকের জন্ম হয়েছে। রাজশাহীতে কেন নতুন করে এদের জন্ম হবে না? জন্ম হয়েছে, আমরা প্রতিহত করব।’ জেলার সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘সংবর্ধনার মঞ্চ থেকে কালাম (এমপি আবুল কালাম আজাদ) আমাকে গালি দিয়েছেন। কোনো ভদ্র-শিক্ষিত মানুষ এটা করেন না। এর বিচারের ভার আমি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরই দিলাম।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহানও বক্তব্য দেন। সভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন ও মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন। সভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও অনেক নেতা বক্তব্য দেন। তারাও ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ রাজশাহী থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেন। সভায় মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ৯ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেন।