রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি |
প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের একটি খাবারের দোকানে গিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ-সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড পদ্মা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। এতে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে দোকানদারের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতে শোনা গেছে।
অডিও রেকর্ডে ছাত্রলীগ নেতাদের বলতে শোনা গেছে, বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ‘কনসার্নে’ আছে। চাঁদা না দিলে দোকান বন্ধের হুমকি দেন তাঁরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইফতারির পর ক্যাম্পাসের একটি খাবারের দোকানে গিয়ে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা দাবি করেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী দোকানি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান ওরফে সোহাগ এবং শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও ওই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিনহাজুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে জাহিদ হাসান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী এবং মিনহাজুল ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী।
অডিওতে জাহিদ হাসানকে দোকানির উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘ভাইয়ের নাম মিনহাজ। আমার নাম সোহাগ। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই বিষয়টা প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির কনসার্নে আছে। যেহেতু দুই দিক থেকে আইছি, এখন বুঝতে হবে কনসার্নে আছে। যেহেতু ডেট নিছেন...।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও আমি আর সাদিক ভাই (শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) এক দিন এসেছিলাম। আপনি বললেন যে সমস্যা নাই মিনহাজ ভাইয়ের সাথে আপনার কথা হয়েছে। আপনি যেহেতু কুলাইতে পারবেন না, তো ডেট নিয়েছেন কেন ১২ তারিখ পর্যন্ত?’
এরপর দোকানিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি দিতে পারব না। আমার যেখান থেকে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে পাইনি। এখন সেই টাকাটা পেলে দিতে পারতাম।’ পরে মিনহাজুল দোকানিকে বলেন, ‘ভাই, আপনার মনের কথাটা খুলে বলেন তো।’ দোকানি উত্তর দেন, ‘আমি আসলেই দিতে পারছি না। দিলে দেনায় (ঋণ) পড়ে যাব।’
তারপর মিনহাজুলকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি একটা কাজ করেন, আপাতত কিছু টাকা দেন। দিয়ে দোকান চালান। এরপর আবার দিয়েন। এটাই করেন। আপনার ওপর চাপ দিলাম না। আস্তে ধীরে দেন। আপনাকে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না। কারও সাহস নাই। আপনি যদি মনে করেন, এই সাংবাদিক-মামবাদিকদের বলবেন, এটা আপনার ভুল সিদ্ধান্ত।’ এর সঙ্গে জাহিদ হাসান যোগ করেন, ‘যেকোনো জায়গা থেকে যা সাপোর্ট লাগে আমরা দেব। আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। আমরা ভাই-ব্রাদার হয়ে যাব। আপনি আমাদের দেখবেন, আমরা আপনাকে দেখব। এটাই স্বাভাবিক। আপনি আজকে কিছু দেন।’
এরপর মিনহাজুলকে বলতে শোনা যায়, ‘অল্প কিছু হলেও দেন। ভাইরে (সভাপতি) বলব, ভাই (দোকানি) সময় নিয়েছে। আজকে কিছু দিচ্ছে। আগামীতেও দিবে। ভাইয়ের ওপর চাপ দিয়েন না। তাহলে সব ঠিক থাকল। এখানে শুধু আমরা দুজন না, একদম ওপর পর্যন্ত আছে।’ এ সময় অডিওতে দোকানিকে ভয় দেখিয়ে মিনহাজুলকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি চাইলে ছেলেপেলে নিয়ে এসে ব্যবসা নষ্ট করে দিতে পারতাম। এই জায়গায় আপনার ক্ষেত্রে ভালোবাসা বলতে পারেন।’
মিনহাজুলের কথার সঙ্গে যোগ করে জাহিদ হাসান দোকানিকে বলেন, ‘আপনার সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক হবে, এর বাইরে কিন্তু কিছুই না। দিন শেষে ক্ষতি হবে আপনারই। এই যে চাঁদাবাজির নিউজ-টিউজ হলো, আপনি দেখলেন। কী হইলো? আমারও কিছুই হবে না।’ এরপর দোকানিকে রেকর্ডে বলতে শোনা যায়, ‘আমি শিওর দিতে পারছি না। যদি দিতে না পারি, তখন আবার কালার হয়ে যাব।’
দোকানির এ কথা শুনে মিনহাজুল বলেন, ‘এটা কোনো কথা? এক হাত কোনো বিষয় (পাঁচ হাজার)? এইটুকু সাপোর্ট না দিতে পারলে...কেমনে কী! এদিক-সেদিক থেকে টান দিলেই তো হয়ে যায়।’
পরে দোকানি টাকা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে না পারলে জাহিদ হাসান বলেন, ‘আপনি তো চেষ্টাই করলেন না। চেষ্টা করেন। আপনি বলেন যে আধঘণ্টা পরে আসেন, আমি যতটুকু পারি দিচ্ছি।’ দোকানি তাঁদের বলেন, ‘আমার কি লাখ টাকার ব্যবসা ভাই? পাঁচ টাকার ব্যবসা করতে এসে দশ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। আমি দোকানই বন্ধ করে দেব। ডাইনিংয়ে কাজ করি, ওই কাজই করব।’
চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘রোজা-রমজানের মাসে আমি কেন চাঁদা চাইতে যাব। সন্ধ্যায় তো ইফতারির সময়। গতকাল সন্ধ্যায় আমি ইবলিস মাঠে ইফতারি করছিলাম। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’ আরেক ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলামও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আমার নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ রটানো হচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে কথা বলতে হবে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জায়গা আছে।’ একই সুরে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’