প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাসকিফ আল তৌহিদ। তাঁর মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগে। শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় হল থেকে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে গত বছর অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর সভাপতির পক্ষ থেকে ‘হল দেখভালের’ দায়িত্ব নিয়ে আবার হলে ফেরেন তিনি।

ওই দায়িত্ব পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তাসকিফ আল তৌহিদ। জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীকে মারধর, হুমকি, চাঁদাবাজি ও হলের আসন থেকে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে।

এদিকে ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তাসকিফ আল তৌহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের একই জেলায় বাড়ি। সভাপতির আস্থাভাজন হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে রোববার বিকেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁর (তৌহিদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হলে থাকার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তাসকিফ আল তৌহিদ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২০৬ নম্বর কক্ষে থাকেন। তিনি আরবি বিভাগ থেকে ২০২০ স্নাতক (সম্মান) এবং ২০২২ সালে মাস্টার্স পাস করেছেন।

২০২২ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠে তাসকিফ আল তৌহিদসহ তিন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তাসকিফ আল তৌহিদকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও বাকি দুজনকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। ওই ঘটনা তদন্তে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক জরুরি সভায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। সেই তদন্ত আর এগোয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের (ডানে) সঙ্গে তাসকিফ আল তৌহিদ ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ১৩ নভেম্বর নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী বিবেক সাহাকে কক্ষ থেকে নামিয়ে এক জুনিয়র কর্মীকে আসনে তুলে দেন তৌহিদ। বিষয়টি নিয়ে মাঝরাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন।

একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মফিজুর রহমানকে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৌহিদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে হল প্রাধ্যক্ষ উভয় পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।

চলতি মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে তাসকিফ আল তৌহিদসহ চার ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। দোকানিরা অভিযোগ করেছিলেন, ভর্তি-ইচ্ছুকদের সহায়তার কথা বলে চাঁদা আদায় করেছিলেন তাঁরা।

এদিকে ইফতারের নামে তোলা চাঁদা ফেরত চাওয়ায় গত বুধবার নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী খালেদুল ইসলামকে ২০৬ নম্বর কক্ষে আটকে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৌহিদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগ নেতা তাসফিক আল তৌহিদের নেতৃত্বে হল ছাত্রলীগের ইফতার আয়োজনের কথা ছিল। এ জন্য হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলেছেন তৌহিদের কয়েকজন অনুসারী। কিন্তু সেই ইফতারের আয়োজন হয়নি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে তাসকিফ আল তৌহিদ বলেন, শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের একটি অংশ বর্তমান কমিটিকে মেনে নিতে পারেনি। মূলত তারাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। হলের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ শেষ হয়েছে। তিনি একটি ভাষা কোর্সে ভর্তি হয়েছেন এবং হল ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করায় তিনি হলে থাকছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা বিভিন্ন সন্ধ্যাকালীন কোর্স ও শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন, তাঁদের নিয়মিত শিক্ষার্থী বলার সুযোগ নেই। তাঁরা আবাসিক হল ও পরিবহন সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন না।

নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০২২ সালে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পর তৌহিদকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ তুলে নেওয়ায় তদন্ত আর এগোয়নি। পরে ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পর দায়িত্ব পেয়ে তিনি আবার হলে ফিরে আসেন। মূলত তিনি রাজনৈতিক প্রভাবে হলে থাকছেন।’ এ বিষয়ে তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।