চুলের ধরন অনুযায়ী হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে এক দিন। মডেল: অমা সরকার, | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাফিয়া আলম: চৈত্রের খর আবহাওয়ায় চুল রুক্ষ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। ঝলমলে চুলের জন্য তাই বাড়তি যত্নও নিতে হবে। নারকেল তেলকে বলা হয় প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। চুলের যত্নে এই তেলই ব্যবহার করতে পারেন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন। প্রতিদিন তেল দিলেও কিন্তু ক্ষতি নেই। উষ্ণ নারকেল তেলের সঙ্গে সামান্য লেবুর রসও যোগ করে নিতে পারেন।
অতিরিক্ত চুল পড়লে নারকেল তেলের সঙ্গে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপকরণ যোগ করে বিশেষ তেল তৈরি করে নেওয়া যায়। এ ছাড়া সবার জন্যই প্রয়োজন হেয়ার প্যাক। চুলের ধরন অনুযায়ী হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে এক দিন। এই সময়ে চুলের যত্ন নেওয়ার এমন সব উপকরণের আদ্যোপান্ত জানালেন হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
তেল মালিশের সহজ নিয়ম
স্টিলের বাটিতে তেল নিন। অন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিন। এর ওপর তেলের বাটি রাখুন। তেলটা উষ্ণ হয়ে উঠলে বাটি নামিয়ে নিন। চাইলে লেবুর রস যোগ করতে পারেন এই সময়। সব ধরনের চুলের জন্যই তেলে লেবুর রস দেওয়া ভালো। খুশকি থাকলেও উপকার পাবেন। এই তেল ভালোভাবে মালিশ করে নিন। তেল মালিশের পর গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে মাথায় জড়িয়ে রাখুন ২০ মিনিট। যেদিন হেয়ার প্যাক লাগাবেন, সেদিন তোয়ালে সরিয়ে রাখার পর প্যাকটি লাগাবেন।
স্বাভাবিক চুলের জন্য
ত্রিফলার গুঁড়া নিন ১ টেবিল চামচ। সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মেথি, আধা কাপ টক দই ও একটি ডিম নিন। সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে প্যাক তৈরি করুন। প্যাক লাগানোর আধা ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। কন্ডিশনারও ব্যবহার করুন।
শুষ্ক চুলের জন্য
প্যাক তৈরি করতে প্রয়োজন হবে ত্রিফলার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মেথি ১ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, অ্যালোভেরার নির্যাস আধা কাপ। সঙ্গে নিন ১টি ডিম। সব উপকরণ ব্লেন্ড করে প্যাক বানিয়ে ফেলুন। এই প্যাকও আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। সবশেষে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
অতিরিক্ত চুল পড়লে
চুল পড়ার সমস্যায় বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন বিশেষ ১টি তেল। এ জন্য ৪টি আমলকী, ১ টেবিল চামচ মেথি, ১ চা-চামচ কালিজিরা, ১ টেবিল চামচ কারিপাতা এবং ৮টির মতো লবঙ্গ একসঙ্গে থেঁতো করে নিন। একটি পাত্রে এক লিটার নারকেল তেল নিয়ে তাতে ওই থেঁতো করা মিশ্রণটি যোগ করুন। হালকা আঁচে জ্বাল দিন। নেড়েচেড়ে দিন যতক্ষণ না থেঁতো করা মিশ্রণের জলীয় অংশটা মিশে যায়। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। কাচের বোতলে সংরক্ষণ করুন। ব্যবহারের আগে স্টিলের পাত্রে তেল নিয়ে গরম পানির বড় পাত্রের ওপর রেখে উষ্ণ করে নিতে পারেন।
ঢেউখেলানো চুল যাঁদের পছন্দ নয়
এক কাপ পানিতে ১ টেবিল চামচ তিসি ভিজিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর হালকা আঁচে জ্বাল দিন। জ্বাল দেওয়ার সময় মিশ্রণটি নেড়েচেড়ে দিন। আঠালো হয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। ঠান্ডা হলে মিশ্রণটি জেলের মতো হয়ে যাবে। এবার এই জেলের সঙ্গে আধা কাপ টক দই নিন। আরও নিন অ্যালোভেরার নির্যাস আধা কাপ পরিমাণ। সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা পর হাত দিয়ে টেনে টেনে সোজা করে নিন চুল। এরপর ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করুন এবং কন্ডিশনারও লাগিয়ে ফেলুন।
প্রতি সপ্তাহে তিসির জেল তৈরি করাটা ঝঞ্ঝাটের মনে হলে একবারে একটু বেশি পরিমাণে তিসি এবং সেই অনুপাতে পানি নিয়ে জ্বাল দিয়ে নিতে পারেন। একই নিয়মে জেল তৈরি করে কাচের বয়ামে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। তবে ব্যবহারের আগে ফ্রিজ থেকে বের করে জেলটি প্রথমে ঘরের তাপমাত্রায় আনুন। অতটা অপেক্ষা করতে না চাইলে সামান্য গরম পানি মিশিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আসুন। অন্যান্য উপকরণ ব্যবহারের সময়ই যোগ করতে হবে।