টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা | ফাইল ছবি |
সংবাদদাতা গাজীপুর: রাতে হালকা বৃষ্টির পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ ছিল পরিষ্কার। কুয়াশা নেই। শীতও কম। এমন পরিবেশে টঙ্গীর তুরাগতীরে ঢল নেমেছে মুসল্লিদের। বাঁশ আর চটের তৈরি শামিয়ানার নিচে যত দূর চোখ যায়, শুধুই মুসল্লি। থেমে থেমে চলছে জিকির-আসকার, রান্না, খাওয়া ও হাঁটাচলা।
এ চিত্র গতকাল সকালের। আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর তুরাগতীরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ পর্বে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা।
তবে প্রায় সব মুসল্লি চলে আসায় গতকাল মাগরিবের নামাজের পর থেকেই শুরু হয় বয়ান। বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলে বয়ান বন্ধ রাখা হয়।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে আলাদাভাবে। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। এ পর্বের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো ইজতেমা মাঠজুড়ে মুসল্লিরা। শামিয়ানার নিচে অবস্থান করছেন তাঁরা। কেউ রান্না, কেউ খাওয়া, কেউ–বা ব্যস্ত অজু-গোসলে। এর মাঝেই দলে দলে মাঠে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা। মাঠে গিয়ে খুঁজে বের করছেন নিজেদের জন্য নির্ধারিত খিত্তা (অবস্থানস্থল)।
ইজতেমা মাঠের ভেতর কথা হলে ৪৩ নম্বর খিত্তার নুরুজ্জামান বলেন, ‘নামাজ, বয়ান, জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিবছর ইজতেমায় আসি। একটু আগেভাগে আসতে ভালো লাগে। তাই দুই দিন আগেই মাঠে এসেছি।’
বৃষ্টিতে ভোগান্তি
বুধবার রাতে হঠাৎ করেই হালকা বৃষ্টি হয়। এতে বেকায়দায় পড়েন ইজতেমা মাঠের মুসল্লিরা। শামিয়ানা চুয়ে পানি পড়ে কারও কারও সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র ভিজে যায়। এরই মধ্যে গতকাল সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও দুপুর থেকে মেঘলা হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি হয়। এতে নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েন মুসল্লিরা।
কয়েকজন মুসল্লির সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, এবার পুরো মাঠে শামিয়ানা টানানো হয়নি। অধিকাংশ জায়গায় শামিয়ানা টানানো হয়েছে মুসল্লিদের নিজেদের উদ্যোগে। তা ছাড়া শামিয়ানাগুলো মজবুত না হওয়ায় বা পানিরোধক না হওয়ায় বৃষ্টিতে জিনিসপত্র ভিজে গেছে।
ইজতেমা আয়োজকদের একজন খন্দকার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে কয়েক লাখ মুসল্লি মাঠে প্রবেশ করেছেন। আগামীকাল (আজ) ফজরের পর আমবয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এবারের তিন দিনের ইজতেমা।’
প্রশাসনের যত প্রস্তুতি
ইজতেমাকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আনসার সদস্যরা। এর বাইরে ইজতেমা ময়দানকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সঙ্গে প্রস্তুত আছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মুসল্লির মৃত্যু
ইজতেমায় আবদুস সাত্তার (৭০) নামের আরও একজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। গতকাল দুপুরে বার্ধক্যের কারণে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানান দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। আগের দিন মো. জামাল উদ্দিন (৪০) ও ইউনুস (৬০) নামের দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়।