বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা:  জার্মানির মিউনিখ শহরে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক হবে। তাঁদের বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হবে।

বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তাঁর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রীর মিউনিখ সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের অবস্থান হচ্ছে আমরা সব সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং আমরা চাই পৃথিবীতে শান্তি ও স্থিতি বিরাজ করুক। জেলেনস্কি দেখা করতে চেয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। সেখানে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাই হবে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো প্রশ্নই আসে না। রাশিয়া আমাদের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতিম দেশ। রাশিয়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন অপারেশন করার সময় রাশিয়ার একজন নাগরিকও মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ ও ঐতিহাসিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমরা যে বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হয়েছি, সেই বন্ধন অনেক দৃঢ়।’

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের আলোচনার বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দেশে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারে যে চলমান সমস্যা, সেটির কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’ বিভিন্ন আলোচনা হবে এবং সেখানে রোহিঙ্গা বিষয়টি আসতে পারে বলে মন্ত্রী জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে মিয়ানমার থেকে যারা বাস্তচ্যুত হয়েছে, তাদের মিয়ানমার যাতে পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, সেই প্রসঙ্গ উপস্থাপন করব।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করব এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে চলমান সংঘাতগুলো, সেগুলো বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা যখন হুমকির মুখে পড়ে, তখন বৈশ্বিক স্থিতি, অগগ্রতি ও উন্নতি—সেগুলোও হুমকির মুখে পড়ে। সুতরাং এ বিষয়গুলো সার্বিকভাবে সেখানে আলোচিত হবে।’

জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে কী আলোচনা হতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জার্মানিতে রপ্তানি বাড়ানো, দক্ষ জনশক্তি পাঠানো বাড়ানো—এগুলো স্বাভাবিকভাবে আসবে। বিশ্ব ফোরামে জার্মানির সহযোগিতা আমরা চাইব। এ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আমরা তাদের সহযোগিতা চাইব। রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি এবং জার্মানি আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আপনার কাছে আমি প্রথম শুনলাম উনি কী মন্তব্য করেছেন। শোনা কথার ওপর মন্তব্য করা অনুচিত। নিজে দেখে, পড়ে, জেনে এটি নিয়ে মন্তব্য করা উচিত। তবে এটুকু বলতে পারি, সেটি হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের যে বিচার হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে এবং তিনি আদালত কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবার জামিনও পেয়েছেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যরা প্রাণভয়ে এখানে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সীমান্ত বাহিনীর সদস্য—তাদের ফেরত পাঠানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। ভারতেও এ রকম পালিয়ে গিয়েছিল। ভারতও তাদের ফেরত পাঠিয়েছে। আমরা তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে কাজ করছি।’