দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান শেষে বিজয়সূচক চিহ্ন প্রদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ ভোটকেন্দ্রে | ছবি: বাসস |
নিজস্ব প্রতিেদক: আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আর এবার নিয়ে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি। তবে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কে হবে তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল ও এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে।
এ পর্যন্ত ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৭টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৬২টি আসনে। তাঁদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। আর অন্যান্য দল জিতেছে একটি আসনে।
সংসদের প্রধান বিরোধী জাতীয় পার্টি এত কম আসনে জয়ী হওয়ায় বিরোধী দল কে হবে সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অনেক নাটকীয়তা, দেনদরবারের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। সব মিলে এবার ২৬৫টি আসনে দলটির প্রার্থী ছিল। শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া ২৬ আসনের ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে দলের প্রার্থী জিততে পারেননি।
ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কমল। বর্তমানে দলটির ২৩ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গতকাল সকালে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন শেখ হাসিনা। ভোট দেওয়ার পর সেখানে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলে নির্বাচন নিয়ে আর কে কী বলল, তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। তিনি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভোটারদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বিদেশে থাকা অবস্থায় দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৭ মে দিল্লি থেকে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন তিনি।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করার সময় বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন কেবল শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। পরবর্তী সময়ে তিনি আশ্রয় পান ভারতে। প্রবাসে ছয় বছর অতিবাহিত করার পর দেশে ফেরেন। এর পর থেকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন।
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক আসনে ভোট করলেও এবার শেখ হাসিনা একটিমাত্র আসনে গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) নির্বাচন করেছেন। এবার নিয়ে তিনি অষ্টমবারের মতো এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল তিনি এই আসন থেকে প্রায় আড়াই লাখ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এম নিজাম উদ্দিন লস্কর পেয়েছেন মাত্র ৮৬৯ ভোট।
নিয়মানুযায়ী, জাতীয় সংসদের ভোটের পর গেজেটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এরপর নির্বাচিত সব সংসদ সদস্যকে শপথ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দলের সংসদ সদস্যরা সংসদ নেতা নির্বাচন করেন।
এর আগের চারবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিচ্ছেন, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই দলটিতে। নিয়ম অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সংসদ নেতা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের অনুরোধ জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর মন্ত্রিসভা গঠন করবেন সংসদীয় দলের প্রধান শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে।
সংবিধান অনুসারে, ২৯ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এর আগে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদের কার্যভার গ্রহণ করবেন না।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যদের গেজেট মঙ্গলবার প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে ক্ষেত্রে ওই দিন শপথ নিয়ে পরদিন সরকার গঠনের সুযোগ রয়েছে। এমনটা হলে আগামী বুধবার ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসবও পালন করা হতে পারে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা আয়োজনের পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের।
২০১৮ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ২৫৮টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০১৪ সালে ২৩৪ এবং ২০০৮ সালে ২৩০ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে দলটি। এবারের মতো আগের তিনটি নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি (জাপা), ১৪ দলসহ অন্যদের সঙ্গে জোট-মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ।