দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে পুরোনো পাবনার মানসিক হাসপাতালের ওপর মানুষের আস্থা অনেক। এখানে সেবার মানও ভালো; কিন্তু চিকিৎসকসহ জনবলসংকট, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দসহ নানা সমস্যা রয়েছে এখানে। হাসপাতালের চেয়ে এটি অনেকটা বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এসব সমস্যার সমাধানে সরকারকে নজর দিতে হবে।
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাবনার মানসিক হাসপাতাল। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু সরকারি হাসপাতালে মানসিক রোগী ভর্তির সীমিত সুবিধা থাকলেও রোগীর আত্মীয়স্বজন সাধারণত এই হাসপাতাল বেছে নেন। দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গুরুতর মানসিক রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে শুধু পাবনাতেই হয়ে থাকে। আবার দেশের প্রথম ও সবচেয়ে পরিচিত হাসপাতাল হওয়ার কারণে মানুষ এখানে বেশি এসে থাকেন। এখানে আবার সেবার মানও খারাপ না। ফলে এই হাসপাতালের প্রতি মানুষের একধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে।
তবে মানুষের আস্থার জায়গা হলেও সবচেয়ে পুরোনো এই হাসপাতাল নানা সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যার মধ্যে প্রথমেই আসে চিকিৎসক–সংকট। রয়েছে নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট–সংকট। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবও প্রকট। ফলে রোগীদের প্রত্যাশামতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায় না। হাসপাতালের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবন ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতালে বরাদ্দ অনেক কম। ভর্তি রোগীদের পুষ্টিকর ও নিজেদের পছন্দমতো খাবার নিশ্চিত করা যায় না। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের সবচেয়ে বড় মানসিক হাসপাতাল থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না মানুষ।
যেভাবে গড়ে ওঠে হাসপাতাল
অবিভক্ত ভারতবর্ষের এই অঞ্চল থেকে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেতে হতো ভারতের বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে। পাকিস্তান ও ভারত আলাদা রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার পর ১৯৫৭ সালে পাবনা শহর থেকে তিন মাইল দূরে হিমায়েতপুর ইউনিয়নে তৎকালীন শীতলাই জমিদারবাড়িতে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখনকার পাবনা জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ হোসেন গাঙ্গুলী পাবনার মানসিক হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেন।
১১১ দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৯৫৯ সালে। জমির বেশির ভাগই ছিল পাবনার আধ্যাত্মিক সাধক ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। পরে এই হাসপাতালের ৩০ একর জমি পাবনা মেডিকেল কলেজকে দেওয়া হয়। প্রথমে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ৬০। ১৯৬৬ সালে প্রথম দফায় শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ ও পরে ২০০ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
বর্তমান অবস্থা
হাসপাতালের মোট ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি পুরুষ আর ৫টি নারী ওয়ার্ড। মোট শয্যার ৩৫০টি বিনা মূল্যের এবং ১৫০টির জন্য রোগীকে ভাড়া দিতে হয়। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক ভবন, ওষুধ ও মালামাল সংরক্ষণের ভবন, রান্নাঘর, ধোপাঘর, বিনোদন বিভাগ, সিনেমা হল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ও কটেজ মিলিয়ে মোট ৫৩টি ভবন রয়েছে। রোগীদের প্রতিটি ওয়ার্ডে গান শুনতে সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে। রয়েছে টেলিভিশন দেখার সুবিধা। নজরদারির জন্য হাসপাতালের চারপাশে ১০৭টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। লোডশেডিং হলে আলোর ব্যবস্থা রাখতে ৪৮টি সোলার বাতি স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালে একজন পরিচালকসহ ১২ জন চিকিৎসক, ২৮০ জন নার্স এবং ৪০ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ১০০ মানুষের মধ্যে ১৯ জন কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। তাঁদের মধ্যে আবার তিন থেকে চারজন গুরুতর মানসিক রোগে ভোগেন। এর মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার রোগ অন্যতম। যেসব রোগের কোনো এক পর্যায়ে রোগীকে ভর্তির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৩টি সরকারি হাসপাতালে ইনডোর বিভাগ চালু রয়েছে, যাতে প্রায় এক হাজার রোগীর ভর্তির সুবিধা রয়েছে। অবশ্য দেশে ভর্তিযোগ্য মোট মানসিক রোগীর তুলনায় এই সুবিধা অপ্রতুল।
মোট শয্যার মধ্যে পাবনার মানসিক হাসপাতালে ৫০০, ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ২০০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ এবং অন্য ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬০টি শয্যা রয়েছে। উল্লেখ্য, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শয্যাসংখ্যা ৪০০–তে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও আসবাব কেনার পর ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু রোগীদের পথ্য ও ওষুধপত্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সেটি এখনো চালু করা যায়নি।
আস্থা পাবনার হাসপাতালে
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসার সুবিধা থাকলেও রোগীর স্বজনেরা সাধারণত বেছে নেন পাবনার মানসিক হাসপাতাল। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গুরুতর মানসিক রোগের চিকিৎসা শুধু পাবনাতেই হয়। দেশের প্রথম ও সবচেয়ে পরিচিত হাসপাতাল হওয়ায় মানুষ এখানে বেশি আসেন। এখানে কেন আসেন, এমন প্রশ্নে রোগীরা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁদের আস্থার কথা বলেন। তা ছাড়া বিনা মূল্যে বা সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা পাওয়ার কথা তাঁরা জানান। রোগীরা বলেন, এই হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে স্বজনদের থাকতে হয় না। অথচ অন্য হাসপাতালে থাকাটা বাধ্যতামূলক।
তবে আস্থার জায়গাটি তৈরি করেছে এই হাসপাতালের চিকিৎসার মান। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি এখানে বিনা মূল্যে আধুনিক ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার রোগী ভর্তি থেকে এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের ৮৪ শতাংশ রোগের লক্ষণমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা এক থেকে দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার রোগ বারবার দেখা দেয় এবং রোগী ফিরে এলে আবার ভর্তি নেওয়া হয়।
বহির্বিভাগে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী দেখা হয়। বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। নার্সদের আন্তরিক সেবা রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিপুলসংখ্যক রোগী ভর্তি থাকলেও হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার নগণ্য।
সমস্যা
হাসপাতালে সমস্যার মধ্যে প্রথমেই আসে চিকিৎসক–সংকটের বিষয়। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র চারজন মনোরোগবিশেষজ্ঞ আছেন। পদ না থাকায় তাঁদের মধ্যে দুজন আবার সংযুক্ত হিসেবে দায়িত্বরত। তাঁদের শুধু এই ৫০০ ভর্তি রোগী নয়, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা ১৫০ থেকে ২০০ রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। সেই তুলনায় রাজধানীর ২০০ শয্যার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে প্রায় ৫০ চিকিৎসক ও ৫০ শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রয়েছেন। অবশ্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট শুধু রোগীর চিকিৎসা দেয় না; এটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য জনবল সৃজন ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা করে। এখানেও প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম। উচ্চতর পদের অনেকগুলো শূন্য।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, পাবনা মানসিক হাসপাতালে কেন চিকিৎসক কম? এর একটি কারণ হচ্ছে, হাসপাতালে সেবার পরিধি বাড়লেও এটি চলছে পুরোনো জনবল কাঠামোয়। আবার হাসপাতালে থাকা মনোরোগবিশেষজ্ঞের পদগুলোকে ‘ফিডার পোস্ট’ হিসেবে ধরা হয় না। অর্থাৎ এই হাসপাতালে দায়িত্বের সময়টি বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। ফলে চাকরিজীবনে এই অভিজ্ঞতা পদোন্নতিতে কাজে লাগে না। তাই এখানে কেউ থাকতে চান না। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা এই হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নিতে চান না। কারণ, মনোরোগবিশেষজ্ঞের উচ্চতর পদ না থাকায় এখানে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ উচ্চশিক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
শুধু চিকিৎসক নয়, হাসপাতালে পুরুষ নার্সের সংকট রয়েছে। সংকট রয়েছে সাইকোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। জনবলসংকটের কারণে যেসব মানসিক রোগী নিজেদের প্রাথমিক যত্ন নিতেও অক্ষম, তাদের ভর্তি করা সম্ভব হয় না। এখানে কোনো কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি দেওয়া হয় না। নেই শিশুদের চিকিৎসার জন্য ইনডোর সুবিধা। আবার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম সমস্যা নিয়ে আসা শিশুদের জন্য নেই অকুপেশনাল থেরাপি বা স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা।
জনবলের অভাবে চালু হচ্ছে না হাসপাতালের বৃত্তিমূলক বিভাগ। বন্ধ রয়েছে রেডিওলজি সেবা। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় ছোটখাটো পরীক্ষার জন্যও রোগীদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে। জনবলসংকটের কারণে বিদ্যমান সেবার মানও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার রোগীদের দুই বেলার খাবার, সকাল ও বিকেলের নাশতার মাথাপিছু সরকারি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা। বারবার চিঠি দিয়ে এবং তদবির করেও বরাদ্দ বাড়ানো যায়নি। এখানে বাইরে থেকে খাবার আনার ব্যবস্থা নেই। ক্যানটিন নেই। ফলে রোগীরা চাইলেও নিজের টাকায় খাবার কিনতে পারেন না।
হাসপাতালে আসার একমাত্র সড়ক দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা। অধিকাংশ ভবন অনেক আগেই গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। এসব ভবনে নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। কর্মচারীর সংকটে হাসপাতালের ভেতরে–বাইরে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নিরাপত্তাকর্মী ও সীমানাপ্রাচীর না থাকায় বহিরাগত ও মাদকসেবীরা হাসপাতালের ভেতরে আড্ডা দেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এই হাসপাতালকে পাবনা শহরবাসী ও বাইরে থেকে আসা মানুষ বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। এখানে পার্কের মতো ফুচকা, চটপটি ও ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। হাসপাতালের রোগীরা তাদের কৌতূহল এবং বিনোদনের বস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সরকারি কর্মকর্তারাও পাবনায় এলে এই হাসপাতালে পরিবারসহ বেড়াতে আসেন। এই অমানবিক আচরণ বন্ধে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দর্শনার্থী ও হাসপাতাল চত্বরের দোকান থেকে তাঁরা নিয়মিত চাঁদা তোলেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ—তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেন। রোগীপ্রতি তাঁরা ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। এরপর তাঁদের রোগীকে ভর্তি করাতে চিকিৎসকদের চাপ দেন। এ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি, চিকিৎসকদের হুমকি, হাসপাতাল কর্মচারীদের ওপর হামলা এবং নিজেদের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
করণীয় কী
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকার এই হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের ‘মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ (১০০০ শয্যার) হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কয়েক বছর লাগবে। এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রথমেই আসবে বাজেট বরাদ্দ ও জনবল বাড়ানোর বিষয়টি। অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির জনবল কাঠামো পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে সংযুক্তির মাধ্যমে উচ্চতর পদ বাড়ানো সম্ভব। নিম্নতর পদ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাড়ানো যায়।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ পদগুলোকে (নিয়মিত ও সংযুক্ত) ফিডার পদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে বিশেষজ্ঞরা সেখানে থাকতে উৎসাহিত হবেন। তখন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরাও সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন। এতে হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মানে উন্নতি হবে। হাসপাতালকে ঘিরে চলা অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করা প্রয়োজন। রোগীদের ‘দর্শনীয় বস্তু’তে পরিণত করার অরুচিকর ও অমানবিক চর্চা বন্ধ করতে হবে।
এগুলো বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন না, ব্যয়সাপেক্ষও না। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। এতে দেশের অপ্রতুল মানসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার খানিকটা উন্নতি হবে। মানসিক রোগী ও তাঁদের স্বজনদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে। সমাজ ও জাতির মানসিক রোগজনিত ভার কিছুটা লাঘব হবে।
লেখক: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক; জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
তবে মানুষের আস্থার জায়গা হলেও সবচেয়ে পুরোনো এই হাসপাতাল নানা সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যার মধ্যে প্রথমেই আসে চিকিৎসক–সংকট। রয়েছে নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট–সংকট। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবও প্রকট। ফলে রোগীদের প্রত্যাশামতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায় না। হাসপাতালের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবন ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতালে বরাদ্দ অনেক কম। ভর্তি রোগীদের পুষ্টিকর ও নিজেদের পছন্দমতো খাবার নিশ্চিত করা যায় না। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের সবচেয়ে বড় মানসিক হাসপাতাল থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না মানুষ।
যেভাবে গড়ে ওঠে হাসপাতাল
অবিভক্ত ভারতবর্ষের এই অঞ্চল থেকে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেতে হতো ভারতের বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে। পাকিস্তান ও ভারত আলাদা রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার পর ১৯৫৭ সালে পাবনা শহর থেকে তিন মাইল দূরে হিমায়েতপুর ইউনিয়নে তৎকালীন শীতলাই জমিদারবাড়িতে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখনকার পাবনা জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ হোসেন গাঙ্গুলী পাবনার মানসিক হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেন।
১১১ দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৯৫৯ সালে। জমির বেশির ভাগই ছিল পাবনার আধ্যাত্মিক সাধক ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। পরে এই হাসপাতালের ৩০ একর জমি পাবনা মেডিকেল কলেজকে দেওয়া হয়। প্রথমে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ৬০। ১৯৬৬ সালে প্রথম দফায় শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ ও পরে ২০০ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
বর্তমান অবস্থা
হাসপাতালের মোট ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি পুরুষ আর ৫টি নারী ওয়ার্ড। মোট শয্যার ৩৫০টি বিনা মূল্যের এবং ১৫০টির জন্য রোগীকে ভাড়া দিতে হয়। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক ভবন, ওষুধ ও মালামাল সংরক্ষণের ভবন, রান্নাঘর, ধোপাঘর, বিনোদন বিভাগ, সিনেমা হল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ও কটেজ মিলিয়ে মোট ৫৩টি ভবন রয়েছে। রোগীদের প্রতিটি ওয়ার্ডে গান শুনতে সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে। রয়েছে টেলিভিশন দেখার সুবিধা। নজরদারির জন্য হাসপাতালের চারপাশে ১০৭টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। লোডশেডিং হলে আলোর ব্যবস্থা রাখতে ৪৮টি সোলার বাতি স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালে একজন পরিচালকসহ ১২ জন চিকিৎসক, ২৮০ জন নার্স এবং ৪০ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ১০০ মানুষের মধ্যে ১৯ জন কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। তাঁদের মধ্যে আবার তিন থেকে চারজন গুরুতর মানসিক রোগে ভোগেন। এর মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার রোগ অন্যতম। যেসব রোগের কোনো এক পর্যায়ে রোগীকে ভর্তির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৩টি সরকারি হাসপাতালে ইনডোর বিভাগ চালু রয়েছে, যাতে প্রায় এক হাজার রোগীর ভর্তির সুবিধা রয়েছে। অবশ্য দেশে ভর্তিযোগ্য মোট মানসিক রোগীর তুলনায় এই সুবিধা অপ্রতুল।
মোট শয্যার মধ্যে পাবনার মানসিক হাসপাতালে ৫০০, ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ২০০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ এবং অন্য ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬০টি শয্যা রয়েছে। উল্লেখ্য, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শয্যাসংখ্যা ৪০০–তে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও আসবাব কেনার পর ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু রোগীদের পথ্য ও ওষুধপত্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সেটি এখনো চালু করা যায়নি।
আস্থা পাবনার হাসপাতালে
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসার সুবিধা থাকলেও রোগীর স্বজনেরা সাধারণত বেছে নেন পাবনার মানসিক হাসপাতাল। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গুরুতর মানসিক রোগের চিকিৎসা শুধু পাবনাতেই হয়। দেশের প্রথম ও সবচেয়ে পরিচিত হাসপাতাল হওয়ায় মানুষ এখানে বেশি আসেন। এখানে কেন আসেন, এমন প্রশ্নে রোগীরা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁদের আস্থার কথা বলেন। তা ছাড়া বিনা মূল্যে বা সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা পাওয়ার কথা তাঁরা জানান। রোগীরা বলেন, এই হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে স্বজনদের থাকতে হয় না। অথচ অন্য হাসপাতালে থাকাটা বাধ্যতামূলক।
তবে আস্থার জায়গাটি তৈরি করেছে এই হাসপাতালের চিকিৎসার মান। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি এখানে বিনা মূল্যে আধুনিক ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার রোগী ভর্তি থেকে এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের ৮৪ শতাংশ রোগের লক্ষণমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা এক থেকে দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার রোগ বারবার দেখা দেয় এবং রোগী ফিরে এলে আবার ভর্তি নেওয়া হয়।
বহির্বিভাগে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী দেখা হয়। বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। নার্সদের আন্তরিক সেবা রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিপুলসংখ্যক রোগী ভর্তি থাকলেও হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার নগণ্য।
সমস্যা
হাসপাতালে সমস্যার মধ্যে প্রথমেই আসে চিকিৎসক–সংকটের বিষয়। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র চারজন মনোরোগবিশেষজ্ঞ আছেন। পদ না থাকায় তাঁদের মধ্যে দুজন আবার সংযুক্ত হিসেবে দায়িত্বরত। তাঁদের শুধু এই ৫০০ ভর্তি রোগী নয়, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা ১৫০ থেকে ২০০ রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। সেই তুলনায় রাজধানীর ২০০ শয্যার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে প্রায় ৫০ চিকিৎসক ও ৫০ শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রয়েছেন। অবশ্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট শুধু রোগীর চিকিৎসা দেয় না; এটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য জনবল সৃজন ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা করে। এখানেও প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম। উচ্চতর পদের অনেকগুলো শূন্য।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, পাবনা মানসিক হাসপাতালে কেন চিকিৎসক কম? এর একটি কারণ হচ্ছে, হাসপাতালে সেবার পরিধি বাড়লেও এটি চলছে পুরোনো জনবল কাঠামোয়। আবার হাসপাতালে থাকা মনোরোগবিশেষজ্ঞের পদগুলোকে ‘ফিডার পোস্ট’ হিসেবে ধরা হয় না। অর্থাৎ এই হাসপাতালে দায়িত্বের সময়টি বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। ফলে চাকরিজীবনে এই অভিজ্ঞতা পদোন্নতিতে কাজে লাগে না। তাই এখানে কেউ থাকতে চান না। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা এই হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নিতে চান না। কারণ, মনোরোগবিশেষজ্ঞের উচ্চতর পদ না থাকায় এখানে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ উচ্চশিক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
শুধু চিকিৎসক নয়, হাসপাতালে পুরুষ নার্সের সংকট রয়েছে। সংকট রয়েছে সাইকোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। জনবলসংকটের কারণে যেসব মানসিক রোগী নিজেদের প্রাথমিক যত্ন নিতেও অক্ষম, তাদের ভর্তি করা সম্ভব হয় না। এখানে কোনো কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি দেওয়া হয় না। নেই শিশুদের চিকিৎসার জন্য ইনডোর সুবিধা। আবার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম সমস্যা নিয়ে আসা শিশুদের জন্য নেই অকুপেশনাল থেরাপি বা স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা।
জনবলের অভাবে চালু হচ্ছে না হাসপাতালের বৃত্তিমূলক বিভাগ। বন্ধ রয়েছে রেডিওলজি সেবা। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় ছোটখাটো পরীক্ষার জন্যও রোগীদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে। জনবলসংকটের কারণে বিদ্যমান সেবার মানও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার রোগীদের দুই বেলার খাবার, সকাল ও বিকেলের নাশতার মাথাপিছু সরকারি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা। বারবার চিঠি দিয়ে এবং তদবির করেও বরাদ্দ বাড়ানো যায়নি। এখানে বাইরে থেকে খাবার আনার ব্যবস্থা নেই। ক্যানটিন নেই। ফলে রোগীরা চাইলেও নিজের টাকায় খাবার কিনতে পারেন না।
হাসপাতালে আসার একমাত্র সড়ক দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা। অধিকাংশ ভবন অনেক আগেই গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। এসব ভবনে নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। কর্মচারীর সংকটে হাসপাতালের ভেতরে–বাইরে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নিরাপত্তাকর্মী ও সীমানাপ্রাচীর না থাকায় বহিরাগত ও মাদকসেবীরা হাসপাতালের ভেতরে আড্ডা দেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এই হাসপাতালকে পাবনা শহরবাসী ও বাইরে থেকে আসা মানুষ বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। এখানে পার্কের মতো ফুচকা, চটপটি ও ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। হাসপাতালের রোগীরা তাদের কৌতূহল এবং বিনোদনের বস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সরকারি কর্মকর্তারাও পাবনায় এলে এই হাসপাতালে পরিবারসহ বেড়াতে আসেন। এই অমানবিক আচরণ বন্ধে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দর্শনার্থী ও হাসপাতাল চত্বরের দোকান থেকে তাঁরা নিয়মিত চাঁদা তোলেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ—তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেন। রোগীপ্রতি তাঁরা ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। এরপর তাঁদের রোগীকে ভর্তি করাতে চিকিৎসকদের চাপ দেন। এ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি, চিকিৎসকদের হুমকি, হাসপাতাল কর্মচারীদের ওপর হামলা এবং নিজেদের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
করণীয় কী
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকার এই হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের ‘মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ (১০০০ শয্যার) হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কয়েক বছর লাগবে। এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রথমেই আসবে বাজেট বরাদ্দ ও জনবল বাড়ানোর বিষয়টি। অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির জনবল কাঠামো পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে সংযুক্তির মাধ্যমে উচ্চতর পদ বাড়ানো সম্ভব। নিম্নতর পদ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাড়ানো যায়।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ পদগুলোকে (নিয়মিত ও সংযুক্ত) ফিডার পদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে বিশেষজ্ঞরা সেখানে থাকতে উৎসাহিত হবেন। তখন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরাও সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন। এতে হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মানে উন্নতি হবে। হাসপাতালকে ঘিরে চলা অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করা প্রয়োজন। রোগীদের ‘দর্শনীয় বস্তু’তে পরিণত করার অরুচিকর ও অমানবিক চর্চা বন্ধ করতে হবে।
এগুলো বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন না, ব্যয়সাপেক্ষও না। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। এতে দেশের অপ্রতুল মানসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার খানিকটা উন্নতি হবে। মানসিক রোগী ও তাঁদের স্বজনদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে। সমাজ ও জাতির মানসিক রোগজনিত ভার কিছুটা লাঘব হবে।
লেখক: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক; জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা