নাটোরের সিংড়া শহরে আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের পর বিএনপির এক নেতার পেট্রল পাম্প ভাঙচুর করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি নাটোর: ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিন পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সিংড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সাতটি গাড়ি ও একটি পেট্রলপাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিবসহ তিনজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা ১১টার দিকে সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দাউদার মাহমুদ ও রাজশাহী সরকারি নিউ ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জার্জিস কাদিরের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সিংড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় লিফলেট বিতরণ শুরু করে। এ সময় পুলিশ তাঁদের লিফলেট বিতরণ বন্ধ রাখতে বলে। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণ বন্ধ না করায় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল শুরু করেন।
মিছিলটি সিংড়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক হয়ে বাজার এলাকায় আসে। এ সময় পুলিশ বিএনপির নেতা দাউদার মাহমুদকে (৪২) আটক করে। এতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের একটি গাড়ি ও মহাসড়কে দাঁড়ানো পণ্যবাহী ছয়টি ট্রাক ভাঙচুর করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এই সময় বিএনপির নেতা–কর্মীরা পুলিশ সদস্যদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। এতে সিংড়া থানার উপপরিদর্শক আবদুর রহিম, সহকারী পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামানের গাড়ির চালক কনস্টেবল আবদুল মালেকসহ তিন পুলিশ আহত হন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নাটোরের সিংড়া শহরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের সময় এক সহকারী পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বিএনপির নেতা দাউদার মাহমুদ ছাড়াও রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জার্জিস কাদির (৬২) ও যুবদল কর্মী আসাদ আলীকে (২৫) আটক করেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। তাঁর উপস্থিতিতে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বেলা একটার দিকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জুনাইদ আহ্মেদের নেতৃত্বে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সিংড়া শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে সিংড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যায়। এরপর মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা সেখানে বাবলু ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুর চালান এবং স্টেশনটি বন্ধ করে দেন। ফিলিং স্টেশনের মালিক বিএনপি নেতা দাউদার মাহমুদ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, তেমনি নির্বাচনে না যাওয়ার আহ্বান জানানো গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের নেতা-কর্মীরা সেই অধিকারবলে সিংড়ায় লিফলেট বিতরণ করছিল। অথচ পুলিশ তা করতে দেয়নি। বরং তাদের আটক করা হয়েছে। বিএনপি নেতার ফিলিং স্টেশন ভাঙচুর করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ পুলিশের লাঠিপেটায় তাঁদের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। তবে তিনি আহত ব্যক্তিদের পরিচয় জানাতে পারেননি।
তবে পেট্রলপাম্পে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান শেখ বলেন, ‘আমাদের নেতা–কর্মীরা কেউ ভাঙচুর করেনি। তাদের (বিএনপি) নিজেদের মধ্যে বিরোধ আছে। এই কারণেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেতে পারে।
নাটোরের সিংড়া শহরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছেন পুলিশ সুপার মো.তারিকুল ইসলাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিবাদ মিছিল শেষে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেছেন, বিএনপি সন্ত্রাসী কায়দায় ভোটারদের ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করেছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। আহত করেছে। পুলিশের গাড়িসহ সাধারণ গাড়ি ভাঙচুর করে জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণের নামে জনগণকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। পুলিশ তাঁদের ভয়ভীতি না দেখানোর অনুরোধ করলে তাঁরা পুলিশের ওপর চড়াও হন এবং গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় তিন পুলিশ আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
নাটোরে বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ একটি ট্রাক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |