নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার পরিকল্পনার অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব | ছবি: সংগৃহীত |
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনায় জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘কবজি কাটা গ্রুপের’ অন্যতম হোতা মো. হায়াত ওরফে টাকলা হায়াতসহ চারজন এবং ‘বিরিয়ানি সুমন গ্রুপের’ হোতা মো. সুমন ওরফে বিরিয়ানি সুমনসহ (২৮) পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এবং পাশের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। র্যাব বলেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা আগের বিভিন্ন অপরাধ এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন সহিংসতা সৃষ্টির পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন মো. সাগর (১৯), ইসমাইল হোসেন (১৯), মো. সুমন (৪৫), ‘বিরিয়ানি সুমন গ্রুপের’ সহযোগী মো. বাদল (২৬), মো. আকাশ (১৯), মো. রাব্বি (২৮) ও মো. রাসেল (৩৮)।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হামলা ও ছিনতাইয়ে জড়িত অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা করা হয়। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপæঅপর গ্রুপেরæসঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে আসছে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর ও এর আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র্যাব। এরপর র্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়।
র্যাবের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ৪ জন ‘কবজি কাটা গ্রুপ’ এবং ৫ জন ‘বিরিয়ানি সুমন গ্রুপের’ সদস্য। তাদের দুটি গ্রুপে প্রায় ৩০-৩৫ জন সদস্য রয়েছেন। কবজি কাটা গ্রুপটি সন্ত্রাসী টাকলা হায়াত ও আনোয়ারের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া তারা ‘আনোয়ার সিন্ডিকেট’ নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা পূর্বে ‘আনোয়ার গ্রুপ’ নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল। নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে তারা ২-৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। বিরিয়ানি সুমন গ্রুপটি গ্রেপ্তার সুমনের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পথচারীকে আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যান। তাঁরা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পাশের এলাকায় দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তাঁরা টাকার জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতেন। তাঁরা মাদক সেবনসহ মোহাম্মদপুরে মাদক কারবারে জড়িত। মূলত, তাঁরা মোহাম্মদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাতেন। গ্রেপ্তারকৃতরা গাড়িচালকের সহকারী, চালক, দোকানের কর্মচারী ও নির্মাণশ্রমিক, পুরোনো মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা ইত্যাদি পেশার আড়ালে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হায়াতের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারিসংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগও করেছেন। গ্রেপ্তার সাগর, ইসমাইল ও সুমন কবজি কাটা গ্রুপের সদস্য। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারির একাধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছেন। গ্রেপ্তার মো. সুমন ওরফে বিরিয়ানি সুমন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় ১৫-২০ জনের ‘বিরিয়ানি সুমন গ্রুপ’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্যাং তৈরি করেন। তিনি এই সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকায় মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারির ঘটনায় ১২টির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন। গ্রেপ্তার বাদল, আকাশ, রাব্বি ও রাসেল বিরিয়ানি সুমনের সহযোগী। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারির ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাঁরা কারাভোগ করেছেন।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মোহাম্মদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি সহিংসতার পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁরা এলাকায় ধারালো অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখানোসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলেন। এ ছাড়া তাঁরা রাজধানী ঢাকাসহ পাশের এলাকায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যেতেন।