সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ডা. সারওয়ার আলী। মঞ্চে বাঁ থেকে মফিদুল হক, সারা যাকের ও আবু সাইদ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষ, ঢাকা, ৪ জানুয়ারি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিনিধি: মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন পাঠ্যক্রমে ভিন্ন আঙ্গিকে মুক্তিযুদ্ধের পাঠ সংযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে এই পাঠ আরও আকর্ষণীয় এবং কার্যকর করে তুলতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘শিক্ষা-সহায়ক ডিজিটাল কনটেন্ট’ তৈরি ও সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, ইতিমধ্যেই ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বাংলা’ এবং ‘ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান’ বইয়ের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক পাঠের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এগুলো মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন সাপেক্ষে সারা দেশের স্কুলগুলোতে এগুলো সরবরাহ করা হবে। চলতি বছরের শিক্ষাক্রমের প্রথম ত্রৈমাসিক পর্বের আগেই এটি চালু হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা বইয়ের মুক্তিযুদ্ধের পাঠটি নিয়ে তৈরি করা ডিজিটাল কনটেন্টটি বড় পর্দায় উপস্থাপন করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও বেদনার ইতিহাস তুলে ধরা। যে লক্ষ্য নিয়ে এই দেশটির অভ্যুদয় ঘটেছিল, সেই লক্ষ্যের দিকে যেন তারা এগিয়ে যেতে পারে। একটি মানবিক অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ জন্য প্রথম থেকেই নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০০১ সাল থেকে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

ডা. সারওয়ার আলী আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা ও জানানোর যে সচেতন প্রয়াস লক্ষণীয় হয়েছে, তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংগতিপূর্ণ। সে কারণেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বোত্তমভাবে বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডিজিটাল কনটেন্ট সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, গত বছর থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ‘অভিজ্ঞতা লব্ধ শিক্ষার পাঠ’ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি ভিন্নভাবে যুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইয়ের তিন দিনের  রোজনামচা এবং ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজাদের কাহিনি যুক্ত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এই দুটির ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আইটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল করা হয়েছে। তারা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে এই কাজটি করেছেন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরও এটি বিনা মূল্যেই ব্যবহার করতে দেওয়া হবে।

মফিদুল হক জানান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পাঠ্যক্রম সহায়ক এই ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির কাজ চলতে থাকবে। পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির বইয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের বিষয় এর আওতায় আসবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণে তথ্য–উপাত্ত সংগৃহীত হয়েছে। এর মাত্র ১০ শতাংশই গ্যালারিতে প্রদর্শন করার ব্যবস্থা আছে। অবশিষ্ট অংশ সংরক্ষিত রয়েছে তাদের মহাফেজখানায়। সেখান থেকে বহু তথ্য এই ডিজিটাল কনটেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাঠক্রমের বাইরেও যারা জানতে আগ্রহী হবে তারা এখান থেকে সহজেই অনেক তথ্য জানতে পারবে।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ট্রাস্টি সারা যাকের। সঞ্চালনা করেন কর্মসূচি ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম।

কেমন হবে, কী থাকবে
ডিজিটাল কনটেন্ট উপস্থাপনা করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আবু সাইদ। বিদেশে অবস্থান করায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বিষয়টি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। তাঁরা জানান, মূলত এটি একটি ওয়েব পেজ। এতে ভিডিও, ছবি, সংবাদপত্রের কাটিংসহ বিভিন্ন তথ্য আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি চ্যাটবটও রয়েছে।  মাউশির অনুমোদন পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নাম ঘোষণা করা হবে।

ব্রাউজার থেকে লগইন করে প্রথমেই ব্যবহারকারীর একটি আইডি তৈরি করতে হবে। এরপর খুব সহজেই তারা সেখানে থাকা সূচিগুলোতে ক্লিক করে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে পারবে। যেমন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে যে ফোল্ডার আছে তাতে ক্লিক করলে সেখানে এটি ছোট ভিডিওতে জাহানারা ইমামের জীবনী, শহীদ রুমির আত্মত্যাগ এসব দেখা যাবে। আরও কিছু জানতে  চাইলে ‘ছবি’, ‘সংবাদপত্র’ এসব সূচিতে ক্লিক করতে হবে।

দেখা শেষ হলে নিচে রয়েছে মূল্যায়নের ছক। সেখানে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের বহুনির্বাচনী উত্তরে টিকচিহ্ন দিয়ে শিক্ষার্থী কী জেনেছে, তা জানাতে পারবে। এরপরের ধাপে আছে চ্যাটবট। শিক্ষার্থী যদি নিজেই কিছু জানতে চায়, তবে তা লিখে প্রশ্ন করতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তাৎক্ষণিকভাবে সেসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। এর ফলে শিক্ষকদের ছাত্রদের পাঠ বিষয়ে মূল্যায়ন করা সহজ হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানালেন পরীক্ষামূলকভাবে এই পাঠ সহায়ক ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি শুরু হলো। তারা পর্যায়ক্রমে এটিকে আরও উন্নত এবং কার্যকর করে তোলার চেষ্টা করে যাবেন।