ফাহমিদা শিকদার: উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা, ভারসাম্য বজায় রাখা, বার্ধক্যের লক্ষণ কমানো, রোমকূপের আকার ছোট করা, আর্দ্রতা ও প্রশান্তি—ত্বকের এমন সব চাহিদা ও সমস্যা মেটানোর জন্য ডার্মাটোলজিস্টরা নায়াসিনামাইডকে সবার সামনে রেখেছেন। অনেক ডার্মাটোলজিস্ট একে সৌন্দর্য–দুনিয়ার ‘টেইলর সুইফট’ও বলছেন। কথাটা মজা করে বললেও ভুল বলেননি কেউ। টেইলরের মতোই সুপারস্টার এই নায়াসিনামাইড।
কয়েক বছর আগে ট্রেন্ডে এসেছিল নায়াসিনামাইড। তখন থেকেই ডার্মাটোলজিস্ট, স্কিনফ্লুয়েন্সার, অ্যাসথেটেশিয়ান ও ত্বকের যত্নের ব্যাপারে সচেতনদের প্রিয় অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালেও এর ব্যবহার অনেক বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভিটামিন সি-এর সবচেয়ে ভালো বিকল্পের কারণে প্রথম দিকে নায়াসিনামাইডের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছিল। অনেকেই আছেন, যাঁদের ত্বকে ভিটামিন সি ব্যবহারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু অন্যদিকে নায়াসিনামাইড ত্বকে কোনো সমস্যা তৈরি না করেই ভিটামিন সি-এর মতো ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে এবং বয়সের লাগাম টানে। পাশাপাশি ত্বকে প্রোটিন (কেরাটিন) গড়তে সাহায্য করে। এ ছাড়া আর্দ্রতা আটকে ও পরিবেশদূষণের ফলে হওয়া ক্ষতির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা এবং তা সারিয়ে তোলার ক্ষমতাও রাখে।
নায়াসিনামাইডের সাহায্যে ত্বকে সেরামাইড নামের লিপিড ব্যারিয়ার জন্মায়, যা আর্দ্রতা ধরে রাখতে সক্ষম। এটি ইনফ্ল্যামেশন দূর করতে পারে। এ জন্য যাঁদের ত্বকে একজিমা, রোজেশিয়া, ব্রণের মতো সমস্যা আছে, তাঁরা নায়াসিনামাইডযুক্ত পণ্য ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের রোমকূপ বড় হতে থাকে। তখন ওপেন পোরস বা রোমকূপ বেশ চোখে পড়ে। পোরস বড় হলে এতে খুব সহজে ধুলাবালু বা মেকআপ পণ্য আটকে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস বা ব্রণ হতে পারে। নায়াসিনামাইডযুক্ত সিরাম বা ক্রিম ত্বকের রোমকূপের আকার স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
এটি শুষ্ক, তৈলাক্ত, সংবেদনশীল—সব ত্বকের জন্যই উপযোগী। সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে যে তেল নিঃসৃত হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নায়াসিনামাইড। এভাবে ব্রণপ্রবণ ত্বককে ব্রণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এটি। এ ছাড়া এটি একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। তাই ব্রণ সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর নায়াসিনামাইড। অন্যদিকে ত্বকের পরিণত, অপরিণত যেকোনো ধরনের বয়সের ছাপ দূর করতে পারে। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির ফলে হওয়া ক্ষত এবং হাইপারপিগমেন্টেশন সারিয়ে তুলতেও এটি অনেক কার্যকর।
নায়াসিনামাইড ত্বকে সিরাম ও ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এখন অনেক মেকআপ কোম্পানি নায়াসিনামাইডযুক্ত মুখের ত্বকের মেকআপ পণ্য বানাচ্ছে। ত্বকের যত্নে এগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া নায়াসিনামাইড খাবার ও সাপ্লিমেন্টের সঙ্গে গ্রহণ করা যাবে। সবুজ সবজি, মটরশুঁটি, কিডনি বিন, ফাভা বিন, ব্ল্যাক বিন, মুগ ডাল, কাবুলি ছোলা, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদিতে অনেক নায়াসিনামাইড আছে।