প্রতিনিধি নয়াদিল্লি: বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের সঙ্গে কংগ্রেস আগামীকাল রোববার থেকে রাজ্যে রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা শুরু করতে চলেছে। রোববার দিল্লি নিয়ে আম আদমি পার্টির (আপ) সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির তৈরি করে দেওয়া ‘ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স কমিটি’র (এনএসি)। দিল্লি ছাড়া বিহার নিয়েও আলোচনা করবে এই কমিটি। কমিটির সদস্যরা কথা বলবেন জনতা দল (ইউনাইটেড) (জেডিইউ), রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও সিপিআইয়ের (এমএল) প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এনএসি সূত্র শনিবার এ খবর নিশ্চিত করেছে।

এনএসির ওই সূত্র জানিয়েছে, তারা চায় জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব শরিকের সঙ্গে সব রাজ্যের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলতে। যে দুই রাজ্য নিয়ে জটিলতা সবচেয়ে বেশি, সে দুটি হলো পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাব। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও পাঞ্জাবে আপ নেতৃত্বের মতো ওই দুই রাজ্যে কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যেও আসন সমঝোতা নিয়ে মতভেদ ও বিরোধিতা প্রবল। কমিটির সূত্রের মতে, জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দিয়ে তারা চাইবে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে। এআইসিসির এক নেতা এই প্রসঙ্গে আজ শনিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের কাছে জাতীয় স্বার্থই প্রথম ও প্রধান। সেই কারণেই দল এবার মোটামুটিভাবে ঠিক করেছে, লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেস কমবেশি ২৫৫ আসনে লড়বে। বাকি আসনগুলোতে পূর্ণভাবে সমর্থন করবে জোট শরিকদের। তিনি বলেন, কংগ্রেস ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে। তাঁদের আশা, অন্যদের মনোভাবও ইতিবাচক হবে।

বিজেপিকে হারানোর তাগিদ এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে বিহারের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোট নেতৃত্ব প্রাথমিকভাবে একটা সমাধান সূত্রে পৌঁছেছেন। তাতে ভাবা হয়েছে, সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম এই রাজ্যের ৪০টি আসনের মধ্যে জেডি (ইউ) ও আরজেডি লড়বে ১৬টি করে মোট ৩২ কেন্দ্রে। বাকি ৮ আসনের মধ্যে কংগ্রেস লড়বে ৫টিতে, সিপিআই (এমএল) ৩টিতে। এই সূত্রে কিছুটা আপত্তি জানিয়েছে জেডি (ইউ)। ২০১৯ সালের ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে তারা ১৭ আসনে দাঁড়িয়ে ১৬টিতে জিতেছিল। কিষেনগঞ্জ কেন্দ্রটি তারা ৩৪ হাজার ভোটে হেরেছিল কংগ্রেসের কাছে। এবার ওই আসনটিও তারা দাবি করেছে। ওই দাবি কংগ্রেস মেনে নিলে জেডি (ইউ) ও আরজেডি দুই দলই ১৭টি করে কেন্দ্রে লড়বে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস দাঁড়াবে পাঁচটিতে, একটিতে সিপিআই (এমএল)। প্রাথমিক ফর্মুলা ১৬+১৬+৫+৩ গ্রহণযোগ্য না হলে ১৭+১৭+৫+১ যাতে হয়, সেই চেষ্টা করতে এনএসিকে সুপারিশ করেছে বিহার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। এখানে দেখার, সিপিআই (এমএল) একটি মাত্র কেন্দ্রে সন্তুষ্ট হয় কি না। গত ভোটে তারা বাম ফ্রন্টের শরিক হিসেবে ৪টি আসনে লড়েছিল। যদিও একটি আসনও পায়নি। রাজ্যের ৪০ আসনের মধ্যে বিজেপি–জেডিইউ জোট ৩৯টি জিতেছিল। কংগ্রেস একটি।

শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রাথমিক কথাবার্তা চালানোর জন্য কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ১৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে এনএসি গঠন করা হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের নেতা মুকুল ওয়াসনিককে আহ্বায়ক করা হয় ওই কমিটির। অন্য সদস্যরা হলেন রাজস্থানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, ছত্তিশগড়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, উত্তর প্রদেশের নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সালমান খুরশিদ ও রাজস্থানের নেতা মোহন প্রকাশ। ঠিক হয়, শরিকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা যা ঠিক করবেন, তা চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুমোদিত হবে শীর্ষস্তরে। সেখানেই বিতর্কিত আসনের নিষ্পত্তি ঘটানো হবে।

কমিটি সূত্রের আশা, দিল্লি নিয়ে আপ নেতৃত্বের সঙ্গে বিশেষ মনোমালিন্য হয়তো হবে না। কারণ, রাজধানী–রাজ্যে লোকসভার সাতটি আসনই বিজেপির দখলে। আবার রাজ্য সরকার আপের। কংগ্রেসের কিছুই নেই। গত ভোটে কংগ্রেস চারটি আসন চেয়েছিল। আপ দুইটির বেশি দিতে চায়নি। প্রদেশ কংগ্রেসের একটা বড় অংশ (অজয় মাকেন গোষ্ঠী) আপের সঙ্গে সমঝোতায় তখনো রাজি ছিল না। এখনো নয়। সেই নেতৃত্বকে সরিয়ে সমঝোতাপন্থী নেতাদের হাতে (অরবিন্দ সিং লাভলি গোষ্ঠী) দিল্লির দায়িত্ব কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ আপের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইডি–সিবিআইয়ের হাতে জেরবার হচ্ছে। আবগারি–কাণ্ডে কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা করছেন। কংগ্রেস মনে করছে, আপ চাপে আছে বলে এবার হয়তো দিল্লি নিয়ে বিশেষ সমস্যা হবে না।

সমস্যা বেশি পাঞ্জাবে। সেখানে কংগ্রেসের একটা বড় অংশ মনে করছে, আপের সঙ্গে হাত মেলালে বিজেপি ও অকালিদের লাভ হবে। ওই রাজ্যে গতবার বিজেপি–অকালি জোট ছিল। এখন নেই। তবে ভোটের আগে সেই জোটবন্ধনের সম্ভাবনা কংগ্রেস উড়িয়ে দিচ্ছে না।

দক্ষিণের চার রাজ্যের মধ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায়। তামিলনাড়ুতে ডিএমকের সঙ্গে জোট জোরদার। কংগ্রেস দুর্বল অন্ধ্রপ্রদেশে। তবে সেখানে তারা ঘর গোছাতে শুরু করেছে। দলে টেনেছে মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির নিজের বোন শর্মিলাকে। ভাইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শর্মিলা গড়ে তুলেছিলেন ওয়াই এস আর কংগ্রেস। জগনমোহন দুর্নীতি মামলায় জেলে থাকার সময় দলের হাল ধরেছিলেন শর্মিলাই। পরে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে তিনি গড়ে তোলেন ওয়াই এস আর তেলেঙ্গানা পার্টি। সেই দলকে কংগ্রেসে মিশিয়ে দিয়েছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে ওই রাজ্যে দলের নেতৃত্ব শর্মিলার হাতেই তুলে দিয়েছে কংগ্রেস।