ঈশ্বরদীতে প্রসূতি মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন, হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা

ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে আলো জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে প্রসূতির মা, স্বামী, শ্বাশুড়িসহ স্বজনদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুপুর থেকে ওই বেসরকারি হাসপাতালটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে পাবনা সিভিল সার্জন।

বুধবার দুপুরে ঈশ্বরদী শহরের হাসপাতাল রোডে আলো জেনারেল হাসপাতালের সামনে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার ফজলে রাব্বির গর্ভবতী স্ত্রী অন্তরা খাতুনকে আলো জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যায় হাসপাতালের স্বতাধিকারী ডা. মাসুমা আঞ্জুমা ডানা এবং তার স্বামী ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা ডা. শফিকুল ইসলাম শামীমের তত্ববধানে সিজার অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরপরই রোগীর অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ার হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোগী আনা হলে হাসপাতাল থেকে মৃত্যু ঘোষণা করা হয়। এনিয়ে স্বজনদের অভিযোগ, "অ্যানেস্থেসিয়া ভালোভাবে করা হয়নি। চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।"

এদিকে স্বজনরা সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় আজ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। দুপুরে প্রসূতির স্বামী ফজলে রাব্বির নিজ বাড়ি সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে আলো জেনারেল হাসপাতালের সামনে গিয়ে মানববন্ধনের চেষ্টা করেন। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের মানববন্ধনে বাধা দেন ও হামলা করেন। পরে থানা ও শহরের স্টেশন সড়কে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও পথসভা করেন তারা।

ফজলে রাব্বী ও রোগীর শ্বাশুড়ি জান্নাতুল ফেরদৌস রুনু বলেন, ‘ঘটনার দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের ওষুধ কিনতে বাহিরে যেতে বলেন। আমরা এসে দেখি রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেওয়া হয়েছে। আমাদের ওষুধ না নিয়েই তাদের ওষুধ দিয়েই রোগীকে অপারেশন করা হয়। ঠিক মতো অ্যানেস্থেসিয়া করা হয়নি। অপারেশনেরে পরপরই রোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে দুইবার চিৎকার দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তারাহুড়ো করে অপারেশন করে যখন দেখে রোগীর অবস্থা খারাপ তখন তাকে অন্যত্র নেয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা রাজশাহীতে নেওয়ার পথেই রোগী মারা যায়। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। যাতে আর কেউ এভাবে মৃত্যুবরণ না করেন।"

 ডা. শফিকুল ইসলাম শামীম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর অপারেশনের পর হঠাৎ খিচুনি ওঠে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। পরে খিচুনি বন্ধ না হলে আমরা রোগীকে দ্রুত রাজশাহীতে নিয়ে যেতে বলি। রোগী তার হাসপাতালে বা ভুল চিকিৎসায় মারা যায়নি। রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়ার পরে মারা গেছে।"

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে অভিযোগের পরপরই হাসপাতালটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান।

তিনি বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে সংশ্লিস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আসমা খান বলেন, আলো হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছি। নির্দেশনার পরপরই হাসপাতালটি বন্ধ করা হয়েছে।