দেশে ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে বর্জনের মুখে পড়েছে পাঁচটি

নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ রোববার অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনসহ স্বাধীন বাংলাদেশে ১২টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ৪টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর। ২০০৮ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ড. শামসুল হুদা কমিশনের সময় প্রথম রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর পর থেকে নিবন্ধনবিহীন কোনও দলের দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে যেকোনও দল, জোট বা সঙ্ঘ নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর আগে দেশে ৮টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শুরুর আগে ও পরে অনুষ্ঠিত ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৫টির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের বড় একটি অংশের নির্বাচন বর্জনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি নির্বাচন দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে অবস্থান করা অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি একযোগে বয়কট করেছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগ আরও একটি সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথভাবে একটিসহ বিএনপি বর্জন করেছে চারটি সংসদ নির্বাচন। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) একটি নির্বাচন বর্জন করেছে। এর বাইরে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় বড় দুই দলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নির্বাচন বর্জন করেছে বা ভোটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে।

বাংলাদেশে নির্বাচন বর্জনের প্রথম ঘটনা ঘটে ১৯৮৬ সালে। ওই সময় জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থেকে ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে। তার আগে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল বর্জন করে। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয়। অংশগ্রহণ করে মোট ২৮টি রাজনৈতিক দল। এতে ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। ভোটের হার ছিল ৬৬.৩১ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে ৭৬টি আসন পায়। আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যোগ দিলেও এক পর্যায় তারা সংসদ বর্জন করে। ওই সংসদের মেয়াদ ছিল ১৭ মাস।

এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করে। নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫১.৮১ শতাংশ। জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। নির্বাচনে মাত্র আটটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। ১৯টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)। এ সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর সাত মাস।  ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতন হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ অনেকগুলো  দল  এ নির্বাচন বর্জন করে। ৪১টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বিএনপি ২৭৮টি আসন পেয়ে একতরফা জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে অন্য দলগুলোর মধ্যে কেবল ফ্রিডম পার্টি একটি আসন পায়। এ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ২৬.৫৪ শতাংশ। এ সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ৮১টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বেশি দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৪.৯৬ শতাংশ। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনেও দেশের বেশিরভাগ দল অংশ নেয়। এই নির্বাচনে ৫৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে (নবম জাতীয় সংসদ) ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৩৮টি অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮৭.১৩ শতাংশ। এটি দেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার রেকর্ড।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি, জামায়াত, সিপিবিসহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ দলই বর্জন করে। নির্বাচনে মাত্র ১২টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। এই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। ফলে ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪০.০৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সবগুলোই অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০.২০ শতাংশ।

আজ হতে যাওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টি অংশ নিচ্ছে। বিএনপি ও তাদের মিত্র ১৬টি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এবার নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো হলো— বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (আম্বিয়া), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।