রাজশাহীর তানোরে নৌকার কর্মী–সমর্থকদের নির্বাচনী ভোজ। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বহাড়া মাদ্রাসা মাঠে | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের তিনটি গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে নৌকার প্রার্থীর কর্মীরা নির্বাচনী ভোজের আয়োজন করেন। তানোরের তিনটি গ্রামে তিনটি খাসি মেরে এই ভোজের আয়োজন করা। এ ব্যাপারে তানোরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা রাতেই মৌখিক অভিযোগ করেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রাজশাহী-১ আসনে নৌকার প্রার্থী টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী। এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান (ঈগল প্রতীক) গত ৩০ ডিসেম্বর গোলাম রাব্বানীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
গোলাম রাব্বানীর কর্মী-সমর্থকেরা জানান, বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন ছিল। দিনের কর্মসূচি শেষে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বহাড়া মাদ্রাসা মাঠে, চোরখৈর গ্রামের নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর বাড়ির সামনে ও চন্দনকোঠা গ্রামের আমিনুলের দোকানের পাশে ভোজের আয়োজন করা হয়। চোরখৈর গ্রামে নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর বাড়ির সামনে রান্না শেষে প্যাকেটে করে খাবার পরিবেশন করা হয়। অপর দুই জায়গায় আসা মানুষেরা অনুষ্ঠানস্থলেই বসে খাবার খান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যার পর থেকে তিনটি জায়গায় রান্না শুরু হয়। তিনটি ভোজসভাতেই তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ওরফে ময়না নৌকার সমর্থনে বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যের পরই খাওয়াদাওয়া শুরু হয়। রাত প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত খাওয়াদাওয়া চলে।
বহাড়া গ্রামে রান্নার সময় স্থানীয় এক যুবক ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছাড়েন। এতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা বহাড়ায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়না (লুৎফর হায়দার রশিদ) ভাইয়ের প্রোগ্রাম শেষে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছি।’ তাঁর কথার ফাঁকে ফাঁকে সাউন্ডবক্সে গান শোনা যাচ্ছিল, “জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা...”।’ আর চুলায় মাংস রান্নার ধোঁয়া ওঠা দৃশ্য দেখানো হচ্ছিল। ওই যুবক বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও ফারুক চৌধুরীর জয়ের লক্ষ্যে আমরা ২০০ লোক এখানে এক জায়গায় হয়েছি। ১০-১৫ জন লোক বিএনপি থেকে এখানে যোগদান করেছেন। এই উপলক্ষে আমরা একটা ভোজের আয়োজন করেছি। সব নৌকাপাগল লোকজন এখানে।’
রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই ভোজের ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর একজন সমর্থক আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোজের আয়োজনের ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেনকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সেখানে বিজিবি পাঠানোর কথা বললেও নৌকার কর্মীরা নির্বিঘ্নে প্রোগ্রাম শেষ করে চলে যান। এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই তিনি সেখানে বিজিবি পাঠান। হয়তো যেতে যেতেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে।
রাজশাহী-১ আসনে ১১ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও দুজন রয়েছেন। তাঁরা হলেন ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) ও বেলুন প্রতীকের প্রার্থী শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান। অন্য প্রার্থীরা হলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুরুন্নেসা (আম প্রতীক), জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন (লাঙ্গল প্রতীক), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান (সোনালী আঁশ প্রতীক), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের বশির আহমেদ (ছড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) আল সামাদ (টেলিভিশন প্রতীক) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সামসুজ্জোহা বাবু (নোঙর প্রতীক)।