হিরো আলম | ফাইল ছবি |
প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী (ডাব প্রতীক) আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম জামানত হারাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘সরকার পাতানো নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করতে বাংলাদেশ কংগ্রেসসহ ভোটে আসা সব রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের টাকা দিয়েছে। যে কজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছে, কংগ্রেস থেকে শুরু করে যে কয়টা দল দাঁড়িয়েছে, প্রতিটা দলকে সরকার টাকা দিয়েছে নির্বাচনে খরচের জন্য। আমার দলকেও টাকা দিয়েছে।’
বুধবার সকালে হিরো আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার দল কংগ্রেসকে প্রথমে এক কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। দলের চেয়ারম্যানসহ জোটের ছয়জন মিলে সেই টাকা খেয়ে ফেলেছেন। এটা নিয়ে দলে গন্ডগোলও লেগেছে। আমাকে দল থেকে ডেকে বলা হলো, নির্বাচনের মাঠে থাকার জন্য সরকার থেকে কিছু ফান্ড দিয়েছে। জানতে চাইলাম কী কারণে ফান্ড দিয়েছে? মাঠে থাকার জন্য। জানতে চাইলাম কত টাকা? বলা হলো, পোস্টারের জন্য ৩০ হাজার করে এবং জামানতের জন্য কিছু। সব মিলিয়ে ৬৫ হাজার করে টাকা দিয়েছে। আমি বলেছিলাম, আমার টাকা লাগবে না।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রামপুরায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হিরো আলম নির্বাচনে সব দলকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। হিরো আলম দাবি করেন, ‘সরকার যে টাকা দিয়েছে, সেই প্রমাণ চাইলে অনেক রেকর্ড আছে। প্রমাণ দিব। অনেক প্রমাণ আমার হাতে আছে।’
হিরো আলম বলেন, সরকার প্রত্যেক প্রার্থীকে এক কোটি, দুই কোটি করে টাকা দিতে চেয়েছিল। এ কারণে ভোটের মাঠে এত এত স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। টাকা না পেয়ে অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। টাকা না পেয়ে জাতীয় পার্টির অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এতগুলো লোককে নির্বাচনী মাঠে ধরে রাখার জন্য সরকার টাকা ঢেলেছে।
এদিকে গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে হিরো আলম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, ‘নির্বাচনে অনেক অনিয়ম হয়েছে। কেন্দ্র দখল হয়েছে। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে। এই নির্বাচন বাতিল করতে হবে।’
৮ জানুয়ারি হিরো আলম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে কয়েকটি অনিয়মের কথা উল্লেখ নির্বাচন বাতিল চেয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে ১৪ দলের প্রার্থী জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন নৌকা প্রতীকে ৪২ হাজার ৭৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা ঈগল প্রতীকে ৪০ হাজার ৬১৮ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া বাকি চারজনই জামানত হারিয়েছেন। হিরো আলম মাত্র ২ হাজার ১৭৫ ভোট পেয়েছেন।
হিরো আলম ছাড়াও জিয়াউল হক মোল্লা এ আসনে ফলাফল বাতিল চেয়ে ভোট পুনর্গণনার আবেদন করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। তিনি নন্দীগ্রাম উপজেলায় কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়ার কথা উল্লেখ করে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন।
হিরো আলম ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (একতারা প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে তিনি ১৪ দলের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরে যান। এরপর কারচুপির অভিযোগ এনে বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেন। কিন্তু গত বছর ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন হিরো আলম।
উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেই আমাকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়। কোনো কারণ ছাড়াই প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এ কারণে এবার বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে প্রার্থী হয়েছিলাম।’
হিরো আলম বলেন, ‘ভোটাররা দল বা প্রতীক দেখে নয়, আমাকে দেখেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু সরকার উপনির্বাচনের মতোই ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমার প্রতীকে সামান্য ভোট পড়া দেখিয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। অথচ নৌকার প্রার্থীর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হওয়ার মতো যোগ্যতাও নেই।’
বড় দলে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘জাতীয় পার্টি জাতীয় বেইমান দল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি অহংকারী দল। দুই দলের নেতারা নিজেদের বিশাল বড় কিছু মনে করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। আমি তাঁদের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছি। অন্যায়ের কাছে আপস করিনি কখনো। এসব কারণে বড় দল বাদ দিয়ে ছোট দল থেকে নির্বাচন করতে হয়েছে।’
হিরো আলম দাবি করেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হলে ভোটের ফল পাল্টে যেত। আমি নিশ্চিত বিজয়ী হতাম। স্বতন্ত্র আরও অনেকেই এমপি হতেন।’