ছেলে বলেছিল, পৌঁছে ফোন দেবে, ফোন আসেনি, হাসপাতালে খুঁজছেন বাবা

 

মুঠোফোনে থাকা ছেলের ছবি নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন বাবা আবদুল হক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আব্বু যাচ্ছি, দেড় ঘণ্টার মতো লাগবে। ঢাকায় পৌঁছে তোমাকে ফোন দেব।’—গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা ছেলের সঙ্গে এমন কথা হয়েছিল বাবার। এরপর ট্রেনে আগুন লাগার খবর পান তিনি। এর পর থেকে আর ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না।

ট্রেনে আগুন লাগার খবর শুনে গতকাল রাতেই ঢাকায় আসেন বেসরকারি একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ষাটোর্ধ্ব আবদুল হক। মুঠোফোনে থাকা ছেলের ছবি নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন এই বাবা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে কথা হয় ফরিদপুরের বাসিন্দা আবদুল হকের সঙ্গে।

আবদুল হকের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁর দ্বিতীয় সন্তান আবু তালহা (২৪) সৈয়দপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি মেকানিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানান আবদুল হক। তিনি বলেন, ঢাকা হয়ে সৈয়দপুর যাওয়ার জন্য ফরিদপুর থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে ছেলেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘চ’ বগিতে তুলে দেন। রাত ৯টায় বেসরকারি টেলিভিশনের খবরে জানতে পারেন, ওই ট্রেনে আগুন লেগেছে।

তাৎক্ষণিক তিনি ছেলের মুঠোফোনে কল করলে বন্ধ পান। তখনই রওনা দিয়ে রাত ১২টার দিকে তিনি ঢাকায় এসে পৌঁছান।

রাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মনোয়ারা হাসপাতালসহ চারটি হাসপাতালে ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এখনো খোঁজ পাননি। ছেলের ফোনও বন্ধ পাচ্ছেন। সকালে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন তিনি।

যশোরের বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় ওই ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ এলাকায় থামানো হয়। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে গেছে। ট্রেনে আগুনে দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ৯টার দিকে চলন্ত ট্রেনটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবদুল হক বলেন, ‘ক্লাস থাকায় সৈয়দপুরে যাওয়ার জন্য ফরিদপুর থেকে তালহাকে ট্রেনে তুলে দিই। ও বলেছিল, ঢাকায় পৌঁছে ফোন দেবে। ফোন আর আসেনি।’