রাজশাহী–৬ আসনে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক। আজ বুধবার রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রাহেনুল হক গত রোববারের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ তুলে বলেছেন, এই নির্বাচনে দুপুরের পর থেকে অনিয়ম হয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তারা নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের হয়ে কাজ করে তাঁকে হারিয়েছেন।
আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ তোলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রতন ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম, চারঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া, সরদহ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলী প্রমুখ।
রাজশাহী-৬ আসনে টানা চতুর্থবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাহেনুল হক পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২৭৮ ভোট।
রাহেনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট মোটামুটি সঠিক ছিল। এর পর থেকে ভোটের কাজে নিয়োজিত পোলিং অফিসার থেকে প্রিসাইডিং অফিসারদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা, নীরবতা ও পক্ষপাতিত্ব দেখেছি। আমি যখন বিভিন্ন সেন্টারে যাই, তখন পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসারদের দেখেছি যে তাঁরা ঘর বন্ধ করে সেখানে কাজ করছেন। প্রশ্ন করি, “আপনি কেন দরজা বন্ধ করে বসে আছেন, আপনি বুথে বুথে ঘুরে দেখবেন।” তার কোনো সদত্তুর তাঁরা দিতে পারেননি। এ ছাড়া বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হলেও ভোটকেন্দ্রে থাকা কর্তৃপক্ষ কোনো সুব্যবস্থা করতে পারেনি। দুপুর ১২টার পর থেকে দেখা যায়, তাঁরা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় এবং তাঁরা একটি পক্ষের হয়ে কাজ করেছেন।’
রাহেনুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকাপয়সার মাধ্যমে শাহরিয়ার আলম নির্বাচনকে একপক্ষীয় করেছেন। নির্বাচনের আগে–পরে কালো টাকার প্রভাব ছিল প্রচণ্ড আকারে। এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অবশ্যই আমি নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবি জানাই। আমি এখানে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাই। এ ব্যাপারে আমি লিখিত অভিযোগ দেব।’
নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় তাঁর কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে জানিয়ে রাহেনুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্বেই শাহরিয়ার আলম বহুবার বলেছেন, ৭ তারিখের পর দেখা হবে। ৭ তারিখের পর ওনার কর্মীরা আমার কর্মীদের ওপর একের পর এক বাড়িঘর পোড়ানো, মারধর থেকে শুরু করে সবকিছুই করছেন। আমি শুনেছি, উনি বিভিন্ন ইউনিয়নে তালিকা করছেন, কারা কারা কাঁচি মার্কার ভোট করেছেন। আমার কয়েকজন কর্মীকে মারধর করা হলেও আমি থানা বা আইনের আশ্রয় নিয়ে এখন পর্যন্ত মামলা করতে পারেনি। কারণ, মামলা নেওয়া হচ্ছে না। পক্ষান্তরে আমাকে বলা হচ্ছে, আপনি শান্ত থাকুন।’
এই নির্বাচনে সুবিধাভোগীদের ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সরকারের সুবিধাভোগী, তারা কোনো ব্যক্তি বা এমপির নয়। অথচ সেই সব সুবিধাভোগীদের ডেকে বলা হয়েছে, “তুমি যদি আমার প্রতীকে ভোট না দাও, তাহলে তোমার কার্ড কেটে দেওয়া হবে।” এই ভয়ভীতিগুলো দেখানো হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে রাহেনুল হক অভিযোগ করেন, বাঘা-চারঘাটের সাধারণ জনগণ তাঁকে সমর্থন দিয়ে তাঁর পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করেন। এর পর থেকেই শাহরিয়ার আলম বিভিন্ন ধরনের নীলনকশা আঁকতে থাকেন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এলে বিভিন্ন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করে তাঁর কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারটাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেন, ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়, বিভিন্ন স্থানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এত কিছুর পরও ভোটাররা তাঁকে ভোট দিয়েছেন। বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। কিন্তু ১ ঘণ্টার ব্যবধানে বিকেল ৪টায় দেখা গেছে ৫৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা একেবারে কাল্পনিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না, দলীয় পদ থেকে বাদ দেওয়া হবে না মর্মে দল থেকে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি উপেক্ষা করে শাহরিয়ার আলম তাঁর পেটুয়া বাহিনী দিয়ে সাধারণ জনগণকে নির্যাতন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবেন। আপনি শাহরিয়ার আলমকে অরাজকতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অপরাধ করলে আমাকে সাজা দিন। আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। দয়া করে আপনার প্রতি আস্থাশীল জনগণ ও নেতা-কর্মীদের রক্ষা করুন।’