রাজশাহী-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় চরমপন্থী

সংসদ সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে আর্ট বাবু (ডানে) ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি রাজশাহী: পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী অঞ্চলের নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে শতাধিক চরমপন্থী রাজশাহীর বাগমারায় অবস্থান করছেন। তাঁরা সংসদ সদস্য এনামুল হকের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন এবং এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছেন বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ভোররাতে বাগমারার গনিপুর ইউনিয়নের আক্কেলপুর উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ককটেল মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের ফটক থেকে দুটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর্ট বাবুর বাহিনী জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, চরমপন্থী নেতা আর্ট বাবুর নেতৃত্বে প্রচুর সংখ্যক বহিরাগত সন্ত্রাসী এলাকায় অবস্থান করছেন। তাঁদের অপতৎপরতায় ভোটারদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে।

■ রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য এনামুল হক।

■ এনামুল হকের পক্ষে কাজ করা আর্ট বাবু রাজশাহী অঞ্চলের দুর্ধর্ষ চরমপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত।

আবদুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু রাজশাহী অঞ্চলের দুর্ধর্ষ চরমপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। ১১ হত্যা মামলার এই আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল অন্ধকার ছেড়ে আলোয় আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাবনায় ৫৯৬ জন চরমপন্থী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। রাজশাহীতে মোট ৬২ জন চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের মধে৵ ৫৫ জনের দলের নেতৃত্ব দেন রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু। তবে আত্মসমর্পণের পরও তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন।

রাজশাহী বিভাগের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান বলেন, এবার এ পর্যন্ত বাগমারায় নির্বাচনী সহিংস ঘটনায় নয়টি মামলা হয়েছে। আর্ট বাবু বেশ কয়েকটি মামলার আসামি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আর্ট বাবুও যে আসামি সে কথা বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকারও জানিয়েছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর আবুল কালাম আজাদের (এবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী) সমর্থক তাহেরপুর পৌর যুবলীগের সহসভাপতি চঞ্চল কুমারকে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও পরে জামিন পেয়ে যান। গত নির্বাচনেও আর্ট বাবু এনামুল হকের হয়ে কাজ করেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা জানান, আর্ট বাবু সংসদ সদস্য এনামুল হকের ডানহাত হিসেবে পরিচিত। সংসদ সদস্য তাঁকে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন। এবারের নির্বাচনেও তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে এনামুল হকের পক্ষে সরব। গত ১৭ ডিসেম্বর তাঁর নেতৃত্বে নৌকার প্রার্থীর একটি ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব মাহাবুর রহমানকে হাতুড়িপেটা করা হয়।

স্থানীয় নেতা–কর্মীরা বলেন, আর্ট বাবুর নেতৃত্বে চরমপন্থীরা বাগমারা এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সংসদ সদস্যের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। গত মাসে আউচপাড়া ইউনিয়নে এনামুল হকের পথসভায় আর্ট বাবুর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন চরমপন্থী অংশ নেন। একপর্যায়ে তাঁদের হামলায় নৌকার প্রার্থীর স্ত্রী খন্দকার শায়লা পারভিন আক্রান্ত হন। এ বিষয়ে থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে।

তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শায়লা পারভিন বলেন, তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলো খন্দকারকে প্রকাশ্যে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে খুন করা হয়েছে, সেই আর্ট বাবু এখন প্রকাশ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যের পক্ষে কাজ করছেন। এখন তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গোয়ালকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার বলেন, সর্বহারা নেতা আর্ট বাবু এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের প্রশ্রয়ে থেকে নৌকার লোকজনকে হুমকি–ধমকি দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।

এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও এনামুল হকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

বাগমারায় এবার ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় পার্টির আবু তালেব প্রামাণিক, বিএনএমের সাইফুল ইসলাম, এনপিপির জিন্নাতুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক ও বাবুল হোসেন।