‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে যশোর রেলস্টেশনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি যশোর: ঢাকার গোপীবাগ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বন্ধ থাকা ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি আবারও চালু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটায় ট্রেনটি যশোরের বেনাপোল থেকে ১৫৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
১০টি বগিতে বেনাপোলসহ বিভিন্ন রেলস্টেশন থেকে ৮৩২ জন এই ট্রেনে ভ্রমণের জন্য টিকিট সংগ্রহ করেছেন। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ট্রেনটি চালু হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
বেনাপোল রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর বেনাপোল এক্সপ্রেস আবারও যাত্রীসেবা শুরু করেছে। পুড়ে যাওয়া বগি সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে রাখা আছে। বেনাপোল থেকে ১৫৪ যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি বেলা একটায় যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৮৩২ যাত্রী টিকিট সংগ্রহ করেছেন। নতুন ১০টি বগি দিয়ে চলাচল শুরু করছে বেনাপোল এক্সপ্রেস।
ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী একমাত্র আন্তনগর ট্রেন পরিষেবা ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ৫ জানুয়ারি বেনাপোল এক্সপ্রেস বেলা একটায় বেনাপোল থেকে ১৫৪ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশে। এঁদের মধ্যে ৪৯ ছিল ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রী। ট্রেনটি যাত্রাপথে ১১টি স্টেশনে বিরতি দেয় এবং বিভিন্ন স্টেশন থেকেও যাত্রী নেয়। ঢাকার কমলাপুর পৌঁছানোর আগেই গোপীবাগ এলাকায় হঠাৎ আগুনে পুড়ে যায় রেলের চারটি বগি। দগ্ধ হয়ে মারা যান শিশুসহ চারজন। এর পর থেকে নিরাপত্তা কারণ দেখিয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বিশেষ সিদ্ধান্তে বন্ধ রাখা হয় পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি ট্রেন।
যশোর স্টেশন থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠা এক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পর কয়েক দিন বন্ধ থাকার পরে আজ আবার ট্রেনটি চালু হয়েছে। এতে আমরা খুশি। এত দিন যশোর থেকে বাসে যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’
রেলওয়ে–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, দেশে নোংরা রাজনীতির কারণে নিরাপদ রেলযাত্রা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। নাশকতাকারীদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। পাঁচ দিন পর আবার বেনাপোল এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের মধ্যে। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা থেকে আবার বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ট্রেন চলাচল এত দিন বন্ধ থাকায় বাড়তি ভাড়ায় বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করতে হয়েছে কলকাতাফেরত যাত্রীসহ ঢাকামুখী মানুষের।
শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। এরপর ট্রেনে আগুনের ঘটনা শুনে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আমরা। এই নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’
তহমিনা খাতুন নামের এক নারী যাত্রী বলেন, ‘সাধারণত আমরা বাস বা প্রাইভেট কারের চেয়ে ট্রেন যাতায়াত আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে করি। কিন্তু এখন ট্রেনেও নাশকতা হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে আমাদের জনমনে আতঙ্ক কাজ করছে।’ ট্রেনে আরও নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এমনিতে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে অহরহ। যাত্রীরা আহত হন। এর মধ্যে নাশকতার ঘটনা আরও আতঙ্ক বাড়িয়েছে। স্টেশন ও ট্রেনে নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার। রেললাইন কিংবা স্টেশনের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের আরও সতর্ক হতে হবে।
বেনাপোল রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই বিল্লাল হোসেন বলেন, রেলে নাশকতামূলক ঘটনা এড়াতে বেনাপোল স্টেশনে যাত্রী ও রেলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। যাত্রাপথে কাউকে সন্দেহ হলে তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।