পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বার্ষিকীতে আলোচনা সভায় অতিথিরা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তন, আগারগাঁও, ২ ডিসেম্বর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: মঞ্চের পেছনের ডিজিটাল পর্দায় একটি ছবি আছে। সেখানে তিনজনকে দেখা যাচ্ছে। একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকি দুজনের একজন সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আরেকজন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
ছবিটি ২৬ বছর আগেকার, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরের। ওই দিন স্বাক্ষরিত হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। অবসান হয়েছিল দেশের এক–দশমাংশ এলাকার সশস্ত্র লড়াইয়ের। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তখনকার জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। আর জেএসএসের পক্ষে সন্তু লারমা। ছবিটি সেই দিনেরই।
আজ চুক্তি সম্পাদনের ২৬ বছর পূর্তিতে সন্তু লারমা দেশের সরকার ও শাসকগোষ্ঠীর কাছে চুক্তি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানালেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হতাশার কথা শোনা গেল সন্তু লারমার মুখে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আজ শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। সন্তু লারমা দুই সংগঠনের সভাপতি। আজকের অনুষ্ঠানেও তিনি ছিলেন সভাপতি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারা। সরকার বলছে, এর মধ্যে ৬৫টি বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। অন্যদিকে, জেএসএস বলছে, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোই এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তির এ অবস্থা নিয়ে জেএসএসের প্রধান সন্তু লারমা বেশ কয়েক বছর ধরেই তাঁর ক্ষোভ ও কষ্টের কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন। আজও বললেন।
সন্তু লারমা বললেন, ‘আমাদের দেশের সরকার ও শাসকগোষ্ঠী এই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁদের বর্তমান যে অবস্থান, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সচেষ্ট হবেন। যদিও সেই কামনা বাস্তবতায় রূপ নেবে না, তবু আমি কামনা করি। তবু আমি সেই আশা–আকাঙ্ক্ষার দিকটাকে বজায় রাখতে চাই।’
সন্তু লারমা আরও বলেন, ‘আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নের যে দীর্ঘসূত্রতা, সেটা নিয়ে নানাজনের নানা মত–পর্যালোচনা থাকলেও আমি মনে করি. এই চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে সরকারের ব্যর্থতাই দায়ী। পার্বত্যাঞ্চলের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে। গত ২৬ বছর পর্যন্ত পার্বত্যবাসী যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের আশায় ছিল, সে আশা আর রাখতে পারছে না।’
চুক্তির মধ্য দিয়ে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থামানো গেলেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে উচ্ছ্বসিত হতে পারছেন না বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘যদিও সরকারপক্ষ বিষয়টি নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত, বিষয়টি অনেকটা আমরা অন্যজনকে ঠকিয়ে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি, ঠিক সে রকমই বলে মনে করি।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। বক্তব্য দেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম এ সবুর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসভাপতি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকœস্নিগ্ধা রেজওয়ানা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্রনাথ মাহাতো এবং ছাত্র ও যুব প্রতিনিধির পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপন ত্রিপুরা।