নাটোর-৪: আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই ‘নৌকা’ ছেড়ে ‘ট্রাকে’

সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ও আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুস | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি নাটোর: বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা নিয়ে নাটোর-৪ সংসদীয় আসন। এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুস। তাঁর প্রতীক ‘ট্রাক’। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ‘নৌকা’ ছেড়ে ‘ট্রাক’ নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচনের মাঠে আরও আটজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুস ও সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর মধ্যে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও ইচ্ছার বাইরে আমরা কেউ নেই। তাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকায় না চড়ে ট্রাকে উঠেছি।’

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুরুদাসপুরের বাসিন্দা স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুসের বাবা প্রয়াত আবদুল কুদ্দুস পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এক মেয়াদে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে স্থানীয় নেতাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেয়। তখন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। উপনির্বাচনে সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলায়। এবারও আওয়ামী লীগ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকেই আবার নৌকার প্রার্থী করেছে। কিন্তু দলীয় নেতাদের সঙ্গে তাঁর আগের দূরত্ব থেকেই গেছে। প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘ট্রাক’ প্রতীক পান। দলের শীর্ষ নেতারা নৌকার প্রচারে না গিয়ে ট্রাকের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস মিয়াজী বলেন, ‘দলের সভানেত্রী এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে শিথিলতা প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা আসিফ আবদুল্লাহকে যোগ্য নেতা মনে করে তাঁর পক্ষে কাজ করছি। তাঁর বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দলের সভানেত্রী তাঁকে পাঁচবার সংসদ সদস্য করেছেন, একবার প্রতিমন্ত্রী করেছেন।’

বড়াইগ্রাম উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুসের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস মিয়াজী, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, বনপাড়া পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাকির হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বনপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মাজেদুল বারী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক রায়হান, যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্য জাহিদুল ইসলামসহ পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

গুরুদাসপুর উপজেলায় আসিফের সঙ্গে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলাল শেখ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাশিষ কবীর ও খুবজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুস বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত সৈনিক। আমার সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরাও আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সৈনিক। যাঁরা সত্যিকারেই আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন, তাঁরা আমাকে ভোট দেবেন।’

এদিকে নৌকার পক্ষে মাঠে আছেন বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন আলী, জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা শামসুজ্জোহা, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক এবং চান্দাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহানাজ পারভিন।

গুরুদাসপুরের নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী, বিয়াঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, মশিন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল বারী, চাপিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নির্বাচনী প্রচারে নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর সঙ্গে কাজ করছেন।

সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই নৌকার সঙ্গে আছি। কখনোই নৌকার সঙ্গে বেঈমানি করিনি। নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলার চেয়ারম্যান হয়েছি, সংসদ সদস্য হয়েছি। এবারও ইনশা আল্লাহ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হব। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা কখনোই নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য প্রতীকে ভোট দেন না। যাঁরা আজ আমার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা অতীতে বহুবার নৌকার সঙ্গে গাদ্দারি করেছেন। অতীতে তাঁরা নৌকার বিদ্রোহী হয়েছেন। সেখানে তাঁরা হেরেছেন। এবারও হারবেন।’

দলের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন—গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তাঁর প্রতীক ঈগল। তাঁর সঙ্গে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুর রহমান ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল সরকার। অন্য প্রার্থীরা হলেন—জাতীয় পার্টির আলাউদ্দিন মৃধা (লাঙ্গল প্রতীক), তৃণমূল বিএনপির আবদুল খালেক সরকার (সোনালী আশ), জাতীয় পার্টির (জেপি) এস এম সেলিম রেজা (বাইসাইকেল), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) গাজী আবু সায়েম রতন (নোঙ্গর), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির শান্তি রিবেরু (ডাব) ও সুজন আহমেদ (দোলনা)।