রাজশাহীতে কিশোর গ্রেপ্তার: ‘আমার ছেলে নাশকতা করেনি, ওর শিক্ষাজীবন যেন ধ্বংস না হয়’

কারাগার | প্রতীকী ছবি

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের সামনে কাগজপত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বাবা। রাজশাহীর পবা থেকে এসেছেন। জানালেন নাশকতার একটি মামলায় পুলিশ তাঁর কিশোর ছেলেকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে। তাকে দেখতে স্বজনদের নিয়ে তিনি কারাগারে এসেছেন।

ওই কিশোরের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলের কয়েক দিন আগে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জিপিএ ৪ দশমিক ৯২ পেয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করছিল। রাজশাহীতে তার চাচার বাসা থেকে রাতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। ও আমার একমাত্র ছেলে। আমার ছেলে নাশকতা করেনি। ওর শিক্ষাজীবন যেন ধ্বংস করা না হয়।’

পুলিশ, স্থানীয় ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে নগরের গৌরহাঙ্গা এলাকায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপির মিছিলের পরে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে দুজন আহত হন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এজাহারে পুলিশ ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারের স্থানের কথা উল্লেখ করেনি। তবে তাঁকে আদালতে পাঠানোর পরে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে স্বজনেরা বলছেন, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরের হড়গ্রাম এলাকায় চাচার বাসা থেকে ওই কিশোরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অবরোধ থাকায় তাকে রাজশাহী কারাগারে রাখা হয়েছে।

মামলার আইনজীবী মঞ্জুর মোর্শেদ খান চৌধুরী বলেন, মামলার এজাহারে প্রথম পাঁচ আসামিকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ আছে। ওই শিশুকে ৬ নম্বর আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও কোথা থেকে গ্রেপ্তার করেছে উল্লেখ করা হয়নি। আবার আদালতে পাঠানোর চিঠিতে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু পরিবার বলছে, বুধবার রাতে বাসা থেকে ডিবি পুলিশ তাকে তুলে নিয়েছে। তাঁরা জামিনের আবেদন করবেন।

রাজশাহী নগরে চাচার বাসায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করছিল ওই কিশোর। তার চাচা প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি পুলিশ তাঁর বাসায় আসে। পরে তাঁর ভাতিজাকে নাশকতার ঘটনায় সাদা মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন তিনি ডিবি কার্যালয়ে খাবার দিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়। তিনি বলেন, ‘এতটুকু একটি ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লেখাপড়ায় নতুন স্তরে যেতে লেখাপড়া করছিল। একটা বড় ধাক্কা এল।’

দুপুরে কারাগারে ওই কিশোরের বাবার সঙ্গে তার মা, খালা ও নানি এসেছেলিন। কিশোরের মা বলেন, ‘আমার ছেলেকে পাঠালাম শহরে চাচার কাছে। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য সে পড়ছে। রাত ১২টার দিকে ঘুম থেকে তুলে তাকে নিয়ে যায়। আজকে কারাগারে গিয়েছিলাম, ওর মন খুব খারাপ। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। ওর স্বপ্ন ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। কিন্তু ওর জীবনে বড় বাধা আসল। সে এসবের কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। আমার ছেলেকে ফেরত চাই। ওর বয়স ১৮ হয়নি।’

এ ব্যাপারে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, তিনি এখন রাজশাহীর বাইরে আছেন। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এজাহারে গ্রেপ্তারের স্থান নেই, আদালতে পাঠানোর সময় বলা হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু পরিবার বলছে, বাসা থেকে রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—এই গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবু তালেব মোল্লা প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান। পরে গরমিলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি মামলার বাদীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। মামলার বাদী একই থানার এসআই মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ওই দিন ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। পরে আরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।