মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক নানা ঘটনায় ১১৫টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তি আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের দেওয়া নভেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শুক্রবার এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠায় এমএসএফ।

বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে সংগঠনটি।  

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  প্রধান বিরোধী দলসহ অধিকাংশ বিরোধী দল ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আয়োজন করে। মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে। ঘটেছে সাংবাদিক লাঞ্ছনা, অগ্নিসংযোগ এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সম্ভাব্য সহিংসতা প্রতিরোধের দায়িত্ব পালনের কারণ দেখিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর তৎপরতা বাধাগ্রস্ত করে তোলে। ফলে বেড়ে যায় সহিংসতা, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা। গায়েবি মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। যার মুখ্য উদ্দেশ্য গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সংগঠকদের ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা, যাতে তারা সভা-সমাবেশ করতে না পারে। এরপরও বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের রাজনীতি করার যে সাংবিধানিক অধিকার, তা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনকে বিপন্ন করে তুলেছে। অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনগুলো হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বেড়েছে সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, তল্লাশি, চলাচলে বাধা সৃষ্টিতে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সব দলের কর্মসূচি পালনের জন্য উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে ওঠে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বর মাসে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মী এবং সন্দেহভাজন সাধারণ মানুষসহ ৩৫টি ঘটনায় গ্রেপ্তার ও আটক হয়েছেন ২ হাজার ৬৬৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৯৩৬ এবং বাকি ১ হাজার ৭২৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে। এ মাসে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর  রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল, অবরোধকে কেন্দ্র করে মামলা হয়েছে মোট ১১৫টি। ঢাকায় মামলা হয়েছে ৩৫টি এবং বাকি ৮০টি মামলা হয়েছে অন্যান্য জেলায়।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি সময়ে অত্যন্ত উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয় ছিল হেলমেট ও মুখোশ পরে গুপ্ত হামলা ও হত্যার মতো ঘটনা। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যখন সারা দেশে একটা নৈরাজ্য বিরাজ করছে, ঠিক সে সময় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো জনজীবনের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি অধিকতর প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ২০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে নাটোরে ১১টি, নওগাঁয় ৫টি, রাজশাহীতে ৩টি, পাবনাতে ১টি হেলমেট পরা মুখোশধারীরা হামলায় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। এতে ৩ জন নিহত ও ১৭ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবাই বিএনপি, জামায়াত বা ইসলামী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।