জয়া আহসান | ফেসবুক থেকে |
মনজুর কাদের: মাসখানেকের বেশি সময় ভারতের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ঘুরতে হয়েছে জয়া আহসানকে। আজ কলকাতা তো কাল গোয়া। পরশু দিল্লি। তিন দিন পর মুম্বাইয়ে! গেল একটা মাস কেটেছে ভীষণ ব্যস্ততায়। চলচ্চিত্র উৎসব, নতুন ছবির মুক্তি নিয়ে তাঁর এত ব্যস্ততা।
জয়া অভিনীত ‘কড়ক সিং’ ৮ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভ-এ। এর মধ্যে পেরিয়েছে কয়েকটা দিন। অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর ‘কড়ক সিং’ মুক্তির পর প্রশংসায় ভাসছেন জয়া। ‘নয়না’ চরিত্রে অভিনয় করে ছবিপ্রেমীদের মন কেড়েছেন। পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী তো গত মঙ্গলবার বলেন, ‘অনেকে আমার কাছে নয়নার (জয়া আহসান) নম্বর চাইছে। কথা বলতে চাইছে। পরিচালক হিসেবে এটা আমাকে আনন্দিত, একই সঙ্গে গর্বিতও করেছে।’
বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান ২০১৩ সালে আবর্ত দিয়ে কলকাতায় অভিনয় শুরু করেন। এক দশকে তাঁর ঝুলিতে জমা পড়েছে দেড় ডজন চলচ্চিত্র। প্রতিটি ছবিতে বরাবরই ভিন্ন সব চরিত্রে হাজির হয়েছেন তিনি। বাংলা ভাষার ছবির পাশাপাশি একটা পর্যায়ে হিন্দি ভাষার ছবিতেও অভিনয়ের প্রস্তাব আসে তাঁর কাছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার লিখেছে, নয়নার চরিত্রে জয়া অপূর্ব।
যে নয়নাকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই নয়না নতুন কোনো চরিত্রে ব্যস্ত হতে চাইছেন। এর আগে কখনো তিনি রানু, বিলকিস বানু, কুসুম, রমিলা, অন্নপূর্ণা দাস হয়ে পর্দায় এসেছেন। প্রতিটি চরিত্রেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন জয়া। তিনি বলেন, ‘দর্শক খুব পছন্দ করছেন ছবিটি। তাই এটি অবশ্যই একটা বিশেষ জায়গায় থাকবে। কারণ, আমার কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে একটা কাজ করলাম। তাও আবার অন্য ভাষায়, অন্য একটা দেশে। এ জন্যই আমার কাছে বিশেষ।’
‘কড়ক সিং’ ভারতের গোয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ার ৫৪তম আসরে প্রদর্শিত হয়। জয়া জানান, প্রদর্শনী শেষে দাঁড়িয়ে ছবিটির প্রতি সম্মান জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর নানা দেশ থেকে চলচ্চিত্রের মানুষেরা এই উৎসবে আসেন। তাঁরা বুঝেছেন, ছবিটার অন্য রকম একটা মেরিট আছে। বিশেষ করে আমার কথাও বলেছেন। তাঁরা এভাবেও বলেছেন যে নয়না চরিত্রটি মরুভূমির বুকে একপশলা বৃষ্টির মতো।’
হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রে ‘কড়ক সিং’ দিয়ে জয়ার অভিষেক ঘটল। আগে থেকে হিন্দি ভাষায় দক্ষ না হলেও আলাদা করে প্রস্তুতি নেননি দেশের এই অভিনয়শিল্পী। এ ছবিতে অভিনয় অভিজ্ঞতা নেওয়ার একটা ধাপ মনে করেছেন জয়া। বলেন, ‘আমি খুব একটা প্রস্তুতি নিইনি। আমি ধীরে ধীরে চরিত্র বুনি। বাবুই পাখি যেভাবে বাসা বানায়, আমিও সেভাবেই বুনি। তবে যখন শুটিংয়ে নেমে যাই, তখন ডেসপারেট থাকি। কারণ, ভালো করতে হবে। তবে হিন্দি ভাষাটা আমার একদমই পরিচিত ছিল না। কিছুদিন কাজ চালানোর মতো করে শিখেছি। যতটুকু শিখেছি, অভিনয়ের জন্য ওটুকুই দরকার ছিল। একদম শুদ্ধ পরিষ্কার হিন্দি দরকার ছিল না। আমাদের সহকারী পরিচালক সৌমিত্র সহযোগিতা করেছে। ইন্টারনেট ঘেঁটেও শিখেছি। এখন তো হিন্দি পড়তেও পারি। অনর্গল বলার চেষ্টাও করি।’
‘কড়ক সিং’ ছবিতে জয়ার সহশিল্পীরা বলিউড ও দক্ষিণি ছবির অভিনয়শিল্পী। তারকাবহুল এ ছবির শিল্পীদের মধ্যে আছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি, সানজানা সাংঘী ও পার্বতী তিরুবোত। তাঁদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ জয়া। এখনো তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘ওরাও আমাকে ট্রিট করেছে, বাংলার একজন বড় শিল্পী হিসেবে। প্রচণ্ড সম্মান দিয়েছে। ছবির শুটিং করতে গিয়ে সবাই একটা পরিবার হয়ে গিয়েছি। সাধারণত ছবির শুটিং শেষ হয়, তারপর সবাই যার যার মতো করে চলে যায়। এটা স্বাভাবিক। এর বাইরে আমাদের জীবন চালিয়ে নেওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে দেখেছি, পার্বতীর শুটিং যেদিন শেষ, সেদিন সে কাঁদছে। বলছে, কেন তাড়াতাড়ি শুটিং শেষ হয়ে গেল! যার শিডিউল পাওয়া যায় না, সেই পঙ্কজ ত্রিপাঠি বলেছেন, শুটিংটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল! আর কটা দিন যদি থাকতে পারতাম। এটা আক্ষরিক অর্থে আমারও উপলব্ধি হয়েছে। কারণ, আমরা এত আনন্দ ও মজা নিয়ে কাজটা করেছি যে বলে বোঝানো যাবে না। শুটিংয়ে টোনিদা স্ক্রিপ্ট হাতে নেন না, যা প্রি–প্রোডাকশন, তা আগেই করেন। শুটিং ফ্লোরে গিয়ে তিনি কাউকে কোনো চাপ দেন না। খুব আরাম করে কাজ করেন। টিমের মাথা যেভাবে চলে, আমরাও সেভাবে চলি। পঙ্কজ ত্রিপাঠির স্ত্রী তো আমাকে ভীষণ আদর করেন। ভীষণ। এখনো সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। আর পার্বতী আমাকে এত ভালোবাসে—ইনস্টাগ্রামে সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে।’
‘কড়ক সিং’–এর পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী জয়াকে নিয়ে আরেকটি ছবি বানানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। জানিয়েছেন সে কথাও। তবে এক মাসের বেশি ভারতে কাটানো জয়া আপাতত কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে চান। নিজের মতো করে কয়েকটা দিন কাটাবেন। নিরিবিলি কোথাও গিয়ে মাটি ও ঘাসের ওপর হেঁটে বেড়াবেন।
মায়ের হাতে বানানো ভেজা পিঠা খাওয়ার কথাও জানালেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে একটু দূরে কোথাও যাব। শীতের সময়, খেজুরের রস খাব। শীতের পিঠাও খাব। আমার মা এমনিতে খুব ব্যস্ত থাকেন। তারপরও আম্মার বানানো পিঠা খাব। এখন শর্ষের ফুল ফুটেছে। গ্রামের দিকে যাব। গ্রামটাই আমাকে অনেক বেশি টানে। বিদেশ অসহ্য লাগছে। তাই কয়েকটা দিন কাটিয়ে আবার নতুন উদ্যমে কাজে নামব।’