মো. আবদুল ওয়াদুদ | ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবদুল ওয়াদুদ পেশায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। তবে ব্যবসা থেকে তাঁর কোনো আয় নেই। তিনি কৃষি, শেয়ার ও কোম্পানির পরিচালকের পারিতোষিক হিসেবে বছরে আয় করছেন ৮৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, যা ২০০৮ সালের তুলনায় ১২ গুণ।

আবদুল ওয়াদুদ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম সংসদ সদস্য হন। পরেরবারও তিনি দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে আর প্রার্থী হননি। এবার আবার তিনি দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

 দুবারের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদের তিনটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের হলফনামায় ব্যবসা খাতে তিনি নিজের আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ টাকা। আর এই খাতে তাঁর নির্ভরশীলদের আয় ছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। পরের মেয়াদে ২০১৪ সালের হলফনামায় এই খাতে নিজের আয় দেখানো ছিল ৬ লাখ টাকা। আর তাঁর নির্ভরশীলদের এই খাতের আয় দেখানো ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় ব্যবসা খাতে তিনি কোনো আয় দেখাননি।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যবসা থেকে আয় না থাকার কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়ে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ব্যবসা খাতে আয় নেই! একটু ভালো করে দেখেন।’ তিনটি হলফনামায় উল্লেখ করা এই খাতের আয়ের পরিমাণ শুনে তিনি বলেন, ব্যবসা থেকে তো তাঁদের আসলে আয় হয় না। তিনি ‘রেমুনারেশন’ (পারিতোষিক) থেকে আয় করেন। তাঁর আইনজীবী এটা করেছেন। নিশ্চয় তিনি ঠিকই করেছেন।

ব্যবসা খাতে ২০১৩ সালের হলফনামায় যে পরিমাণ আয় ছিল, তার প্রায় সমপরিমাণ আয় এবার কৃষি থেকে দেখানো হয়েছে। এ কথা শুনে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তাঁদের কিছু কৃষিজমি আছে। সেখান থেকেই ওই আয় হয়।

ওয়াদুদের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়ে ১২ গুণ
২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আবদুল ওয়াদুদের নিজের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭০ লাখ ৫ হাজার টাকা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যা ছিল ১ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবার তাঁর নিজের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ১ টাকা। এর মধ্যে নগদ ২ কোটি ২১ লাখ এবং বন্ড, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

১৫ বছরের ব্যবধানে আবদুল ওয়াদুদের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি প্রায় ১২ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯৪ লাখ ১ হাজার ৯৭ টাকায়। ২০০৮ সালে ছিল ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ আছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে ছিল ২ লাখ ও ২০১৪ সালে ছিল ১৪ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে এখন তাঁর বিনিয়োগ আছে আরও ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। নির্ভরশীলদের এই খাতে বিনিয়োগ আরও ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে স্থায়ী আমানতে তাঁর স্ত্রীর কিংবা নির্ভরশীলদের কোনো বিনিয়োগ ছিল না।

ওয়াদুদের প্রথম নির্বাচনের সময় কৃষিজমির কোনো উল্লেখ ছিল না। এই খাতের কোনো আয়ও দেখানো ছিল না। ২০১৪ সালে দশম নির্বাচনের সময় এই খাতে আয় দেখানো হয় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এই খাতে নির্ভরশীলদের আয় দেখানো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তখন কৃষিজমির পরিমাণ উল্লেখ না করে শুধু সম্পত্তি অর্জনের মূল্য দেখানো হয়েছিল নিজের ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৫ টাকা এবং স্ত্রীর নামে দেখানো হয় ৪০ লাখ টাকা।

এবারের হলফনামায় কৃষি খাতে নিজের আয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর আয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবার কৃষিজমির অর্জনমূল্য নিজেরটা একই দেখানো হয়েছে। পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৩০৩ শতাংশ। আর স্ত্রীর নামে দেখানো হয়েছে ৩১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীর নামে কৃষিজমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৪০ লাখ। এবার তা কমিয়ে দেখানো হয়েছে ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৭৯৫ টাকা।

আবদুল ওয়াদুদ কৃষির পাশাপাশি শেয়ারবাজার ও সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে আয় করেন ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। কোম্পানি পরিচালক হিসেবে পারিতোষিক পান ২১ লাখ। তাঁর প্রথম নির্বাচনের সময় এই পারিতোষিক ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের নির্বাচনের হলফনামায় দেখানো ছিল ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তাঁর নির্ভরশীলদের মোট আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫২ টাকা। তাঁদের আয়ের উৎস কৃষি, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক আমানত।