শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন মেয়ে। ঢাকা থেকে লাশ আসার অপেক্ষায় মা লাল বেগম। বুধবার বিকেলে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি গুরুদাসপুর: নাটোরের গুরুদাসপুরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন গৃহবধূ রেবেকা খাতুন (৩৮)। বুধবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

গুরুদাসপুরের ধারাবারিষা ইউনিয়নের সিধুলি গ্রামে রেবেকার স্বামীর বাড়ি। গত শুক্রবার রাতে সেখানে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী মেহেদী হাসান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হন রেবেকা। একপর্যায়ে কেরোসিন ঢেলে রেবেকাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে দগ্ধ অবস্থায় তাঁকে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে প্রথমে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গত সোমবার তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়।

রেবেকার বাবার বাড়ি গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লায়। তাঁর বাবা নেই, বৃদ্ধ মা লাল বেগমের কাছেই বড় হয়েছেন। দুই বছর আগে মেহেদীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তবে এটি তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। আগের পক্ষে রকি (১৮) ও সাব্বির (১৪) নামের দুই ছেলে রয়েছে রেবেকার। দুই সন্তানকে নিয়েই স্বামীর বাড়িতে থাকতেন তিনি।

রেবেকার মা লাল বেগম জানান, বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই রেবেকার দুই সন্তানকে নিয়ে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। এই অশান্তির নেপথ্যে ছিলেন শাশুড়ি ও দেবর। অশান্তিকে ঘিরে মাঝেমধ্যেই রেবেকার ওপর চলত শারীরিক নির্যাতন। এ নিয়ে স্বামী-শাশুড়ি ও দেবরের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলাও করেছিলেন রেবেকা। সেই মামলা তিনটি আদালতে চলমান রয়েছে। এ কারণে ছয় মাস ধরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে মায়ের কাছে ছিলেন রেবেকা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার কৌশলে রেবেকাকে ডেকে নিয়েছিলেন স্বামী ও শাশুড়ি। এরপর মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলেন। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা মিলে রেবেকাকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন, ব্লেড দিয়ে শরীর কেটে নির্যাতন করেন। পরে শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।

এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে লাল বেগম বাদী হয়ে রেবেকার স্বামী মেহেদী হাসান (২৬), দেবর তানজিন হোসেন (১৯), শ্বশুর মো. জয়নাল হোসেন ও শাশুড়ি মেহেরজান বেগমকে (৫৫) আসামি করে গুরুদাসপুর থানায় মামলা করেন। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

লাল বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হলেও টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারিনি। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় রাজশাহী ও ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। এখন মেয়ের লাশ আনতেও অন্যের সাহায্য নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখ-কষ্টের কী আছে?’ তিনি মেয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশিদুল ইসলাম বলেন, পরিবারটি গরিব, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে অনুদান সংগ্রহ করে রেবেকার চিকিৎসাসহ ঢাকা থেকে লাশ আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসেন রেবেকার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।