জ্বালানি তেল | ছবি: রয়টার্স |
বাণিজ্য ডেস্ক: লাইবেরিয়া, মার্শাল আইল্যান্ড ও পানামাকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। এই দেশগুলোর পতাকাবাহী জাহাজ যেন রাশিয়ার তেল পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রির জন্য পরিবহন না করে, তা নিশ্চিত করতে চাপ দিচ্ছে এই ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দুই দেশ। সে জন্যই এই চিঠি।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমারা রাশিয়ার তেলে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি দেশটির তেলের দামের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে রাশিয়ার তেল তাদের বেঁধে দেওয়া ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি ও বিক্রির জন্য পরিবহন করা যাবে না।
এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের শেষ দিকে, যদিও অতি সম্প্রতি পশ্চিমারা তা বাস্তবায়নে কঠোর হতে শুরু করেছে। মূলত তেল বিক্রি করে রাশিয়া যেন খুব বেশি রাজস্ব আয় করতে না পারে এবং একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ বজায় তাকে, তা নিশ্চিত করতেই পশ্চিমারা তেলের দাম বেঁধে দেয়।
অন্যদিকে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো যেন এই বেঁধে দেওয়ার দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রির জন্য রাশিয়ার তেল পরিবহন না করে এবং সেই তেলের বিমা বা তা বিক্রির উদ্দেশ্যে অর্থায়ন না করে, সে লক্ষ্যে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রুশ তেল কোম্পানিগুলো তথাকথিত ‘ঘোস্ট ফ্লিট’ বা পুরোনো তেলবাহী ট্যাংকারগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যারা এই নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলে রাশিয়ার তেল ৬০ ডলারের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে সহায়তা করছে। এসব পুরোনো জাহাজ চীন ও ভারতে তেল নিয়ে যাচ্ছে, যদিও পশ্চিমাদের চোখ এড়িয়ে তেল পরিবহনের জন্য খরচও বাড়ছে। রয়টার্সের আরেক সংবাদে বলা হয়েছে, এই দেশগুলোকেও এখন আর বেশি ছাড় দিতে পারছে না রাশিয়া।
তেলের ব্যবসা পর্যবেক্ষণকারী লয়েড লিস্ট ইন্টেলিজেন্স ও তেল বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, পানামা, মার্শাল আইল্যান্ড ও লাইবেরিয়ায় মতো দেশগুলো এই পুরোনো ট্যাংকারগুলোকে তাদের পতাকা লাগিয়ে সমুদ্রে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে। এই রীতি ‘ফ্ল্যাগ হপিং’ নামে পরিচিত, যে কারণে কিছু শেল বা খোলসসর্বস্ব কোম্পানি নিষেধাজ্ঞার চোখ এড়িয়ে রাশিয়ার তেল পরিবহন করতে পারছে। এই শেল কোম্পানিগুলো আবার গঠিত হয়েছে রাশিয়ার তেল পরিবহনের লক্ষ্যেই।
লয়েডস লিস্ট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, ৫৩৫টি ট্যাংকারের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডার্ক ফ্লিট মার্শাল আইল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মাধ্যমে নিবন্ধিত।
এই তিন দেশকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমা বিমা কোম্পানির বিমা ব্যতীত যে জাহাজগুলো তেল পরিবহন করছে, সেগুলোর ঝুঁকির মুখে আছে। বিশেষ করে যে জাহাজগুলো অন্য দেশের পতাকা বহন করছে, সেগুলো। এই দেশগুলো অবশ্য বর্তমানে রুশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই।
এ বিষয়ে এই তিনটি দেশের মার্কিন দূতাবাসের যোগাযোগ করলেও রয়টার্স তাদের কাছ থেকে উত্তর পায়নি।
পশ্চিমের দেশগুলো অবশ্য রাশিয়ার তেলবাহী জাহাজের সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে এই চাপ দিচ্ছে না। বরং তারা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে যে তাদের বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে যেন রুশ তেল বিক্রি হয় এবং পশ্চিমা জাহাজ কোম্পানি ছাড়া রাশিয়ার তেল পরিবহন যেন আরও ব্যয়বহুল হয়।
সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, পানামা সাধারণত এ ধরনের অবৈধ তৎপরতাবিষয়ক মার্কিন অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। একই সঙ্গে তারা লাইবেরিয়া ও মার্শাল আইল্যান্ডকে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এ–বিষয়ক চিঠিতে সই করেছেন যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিভাগের প্রধান লিন্ডসে হোয়াইট, ইউরোপীয় কমিশনের আর্থিক সেবাবিষয়ক ইউনিটের প্রধান জন বেরিগান ও মার্কিন রাজস্ব বিভাগের সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক বিভাগের প্রধান ব্রায়ান নেলসন।
তবে রয়টার্সের হাতে এই চিঠির প্রতিলিপি আসেনি। মার্কিন অর্থ বিভাগ ওয়াশিংটনের যুক্তরাজ্য দূতাবাস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মার্কিন প্রতিনিধি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।