লালনের বাণী ও গান শুনতে দুপুরের পর থেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালনভক্তরা হাজির হন পদ্মহেম ধামে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধু ও বাউলদের নিয়ে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  শনিবার বিকেলে উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের দোসরপাড়ার টেকেনহাট এলাকার ইছামতী নদীর তীরে পদ্মহেম ধামে এ সাধুসঙ্গ হয়। এবারের আসর নিয়ে ১৯ বার হলো সাধুসঙ্গ।

পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কবির হোসেনের সভাপতিত্বে বিকেল চারটার দিকে সাধুসঙ্গের উদ্বোধন করেন মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি উম্মে হাবীবা ফারজানা, সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম।

লালন সাঁইজির বিখ্যাত মারফতি গান, ‘এলাহি আলামিন গো আল্লাহ, বাদশাহ আলমপনা তুমি...’ গানটি দিয়ে এবারের ১৯তম সাধুসঙ্গের প্রহর শুরু হয়। সন্ধ্যায় ‘পার করো হে দয়াল চাঁদ আমারে...’, ‘ধন্য ধন্য বলি তারে...’-এর মতো লালন সাঁইজির বিখ্যাত গান পরিবেশ করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধুরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এসব পরিবেশনা। গান পরিবেশন করেন চুয়াডাঙার সাধু-বাউল আজমিরি ফকির, বাউল লতিফ শাহ, রাজ্জাক বাউল, সমির বাউল, সুকুমার ঘোল, ফরিদপুর থেকে সাধু-বাউল পাগল বাবলু, বংশীবাদক বজলু শাহ, দোতারাবাদক ভুট্টা শাহর মতো বিখ্যাত সাধকেরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চিত্রনায়িকা নিপুণ।

লালনের বাণী ও গান শুনতে দুপুরের পর থেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালনভক্তরা হাজির হন পদ্মহেম ধামে। সন্ধ্যার পর বাড়তে থাকে ভিড়। গান শুনে মুগ্ধ হন শ্রোতারা। গানের তালে তালে ঝোলান মাথাও। গান শেষে হাততালি ও হুল্লোড়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে পদ্মহেম ধাম।

গান শুনে আবেগে আপ্লুত হন নারায়ণগঞ্জ জেলার রবিন ঘোষ। তিনি এবার প্রথম এখানকার সাধুসঙ্গে এসেছেন। মুন্সিগঞ্জে তাঁর কয়েকজন বন্ধু রয়েছেন। রবিন বলেন, ‘অনেকবার কনসার্টে গান শুনেছি। সাধুসঙ্গের গান প্রথম শুনলাম। গান, গানের পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিটি গান ছিল হৃদয়ছোঁয়া।’

সাধুসঙ্গ উপলক্ষে এদিন নদীর ধারে খোলা মাঠে বসে গ্রামীণ মেলা। মেলায় মুখরোচক খাবার, বাচ্চাদের রাইড, গৃহস্থালির বিভিন্ন আসবাবের পসরা নিয়ে বসেন দোকানি। এমন সাধুসঙ্গের আয়োজনে খুশি স্থানীয় মানুষেরা। আয়োজনে এসে উচ্ছ্বসিত দর্শনার্থীরা।

পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবির হোসেন বলেন, ‘লালন সাঁইজি চেয়েছিলেন, আমাদের দেশটা অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার চেতনায় গড়ে উঠুক। তাঁর বাণীতে সেগুলোই তিনি বলেছেন। লালন সাঁইজির বাণী ও দর্শন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ১৯ বছর ধরে এই সাধুসঙ্গ করে আসছি। একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যে সমাজে মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। সামনের দিনগুলোতে আরও ভালোভাবে আয়োজন করার চেষ্টা করব আমরা।’