ঈশ্বরদী বিএসআরআই ডিজি অনিয়মের রাঘব বোয়াল

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) মহাপরিচালক (ডিজি) কৃষিবিদ মো. ওমর আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএসআরআইয়ের সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এম. এ. রহমান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে ও দেশের একমাত্র সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব, কৃষিসচিব, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপিও পেশ করা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসআরআই ডিজি কৃষিবিদ মো. ওমর আলী প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে গাছের চারা রোপণ, মেরামত, যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল ক্রয়ের নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

ইনস্টিটিউটটিতে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ বাণিজ্য, ইক্ষু গবেষণা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভর্তি বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের নামে সরকারি গাড়ি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। গাড়ির জ্বালানি ও চালকের ওভারটাইমের নামে অর্থ উত্তোলন করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের পর থেকে ডিজি ওমর আলী ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি কর্মদিবসের ২৫০ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫০ দিন ছিলেন ভ্রমণে। অফিস করেছেন মাত্র ৩২ দিন।

নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রকল্পের পরিচালক বানিয়ে প্রকল্পের টাকা হরিলুট করেছেন। এসব হরিলুটের টাকা দিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে পাঁচ কাঠা এবং ঈশ্বরদী পৌরসভায় ১০ কাঠা জমি কিনেছেন।

বিএসআরআইয়ের একাধিক বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে এর আগে অনেক ডিজি দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রকল্প পরিচালক হয়েছেন। গবেষণায় দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বর্তমান ডিজির বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়ম, দুর্নীতি, আর্থিক ও নৈতিক কেলেঙ্কারি, গবেষণায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের বিষয়টি এখন সবার জানা। তাঁর কারণে বেশ কয়েকজন নারী কর্মী বিএসআরআই থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্তের মাধ্যমে শেষ হওয়া দরকার বলে মনে করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নম্বরে কয়েক দিন কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে সচিবের একান্ত সচিব নাহিদা বারিক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’

যুগ্ম সচিব রেহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘দপ্তরে আসা সব চিঠিই সেন্ট্রালে রিসিভ হয়। বিএসআরআই ডিজির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বিষয়টি এই মুহূর্তে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘সব অভিযোগই নথিভুক্ত করা হয়। অনেক অভিযোগই অফিশিয়ালভাবে তদন্ত হয়।’

স্মারকলিপিতে প্রতিটি বিষয় ধরে জিজ্ঞাসা করা হলে বিএসআরআই মহাপরিচালক কৃষিবিদ ওমর আলী বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।’

ডিজি আরও বলেন, ‘ঢাকার পূর্বাচলে কোনো জমি আমার নেই। ঈশ্বরদী শহরে তিন কাঠা জমি কেনা রয়েছে। টাকার অভাবে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারি না।’