বিএনপি কর্মী আবদুল মতিন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি শেরপুর: বগুড়ার শেরপুরে ‘গ্রেপ্তার আতঙ্কে’ বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকা বিএনপি কর্মী আবদুল মতিন (৬০) হত্যার ঘটনায় এখনো কোনো গতিই করতে পারেনি পুলিশ। তিন সপ্তাহ পেড়িয়ে গেলও রহস্যই থেকে গেছে হত্যার বিষয়টি। 

এ দিকে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, আতঙ্ক ছড়াতে সরকারি দল অথবা কোনো বাহিনীই মতিনকে খুন করেছে। তাই পুলিশ খুনি শনাক্ত করতে পারছে না। 

পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত আবদুল মতিন উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়ন বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত ১৫ নভেম্বর শেরপুর শহরে বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় আবদুল মতিনকে ৬৪ নম্বর আসামি করা হয়। তখন থেকেই তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে রাতে বাড়িতে থাকতেন না। কখনো কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে আবার কখনো পাশে ঝিনাগাড়ি পুকুর পাড়ে রাত্রিযাপন করতেন। 

গত ২২ নভেম্বর তিনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আর ফেরেননি। পরের দিন সকালে সেই ঝিনাগাড়ি পুকুর পাড় থেকে ২০০ গজ দূরে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই রাতে মতিনের মেয়ে মৌসুমী আক্তার (৩৫) বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু হত্যার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি থানা-পুলিশ। 

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। মামলার বাদী ও নিহতের মেয়ে মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘আমার বাবাকে কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে হত্যা করেছে, পুলিশ তা খুঁজে পায়নি। উপরন্তু তারা আমার ভাইকে সন্দেহ করছে। তাকে মাদকাসক্ত প্রমাণের চেষ্টা করছে।’ 

মতিনের ছেলে মিলন রহমান (৩০) বলেন, ‘পুলিশ আমাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। প্রত্যেকবারই আমি মাদকের টাকার জন্য আমার বাবাকে হত্যা করেছি, এমন ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করছে।’ 

নিহত মতিনের ভাগনে মিল্টন (৩৫)  বলেন, ‘আমার মামার বিরুদ্ধে পুলিশ মিথ্যা নাশকতার মামলা দিয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে মামা বাড়িতে থাকতেন না। এই সুযোগেই অজ্ঞাত খুনিরা তাকে হত্যা করেছে।’ 

সাইফুল ইসলাম নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিএনপির সমর্থক অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় ৬৭ জনের পাশাপাশি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছে। তাই আমার বিরুদ্ধে মামলা না থাকলেও গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে থাকি। এখন আমাকেও এই ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আতঙ্কে আছি।’ 

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর আমাদের মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা করেছে। উল্টো পুলিশের মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমিসহ অনেকেই আত্মগোপনে থাকছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশেই আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের ওপর সরকার দলীয় ও বাহিনীর লোকজন গুপ্ত হামলা করছে, অনেককে হত্যা করেছে। আব্দুল মতিনও একইভাবে খুন হয়েছেন। তাই পুলিশ এখন পর্যন্ত খুনিদের শনাক্ত করতে পারছে না।’ 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা। তিনি বলেন, ‘মতিন হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশ নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা অচিরেই খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।’