বগুড়ায় নিখোঁজ বিএনপির দুই নেতার সন্ধান চেয়ে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাহালু উপজেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী আঁখি বেগম। বুধবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ার কাহালুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বিএনপির দুই নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে একজনের পরিবার। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিকে বগুড়া প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

নিখোঁজ দুই নেতা হলেন কাহালু উপজেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ওরফে হৃদয় এবং উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তাঁরা ছয় দিন ধরে নিখোঁজ। আনোয়ার হোসেনের বাড়ি বীরকেদার ইউনিয়নের ভোলতা গ্রামে। আর দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি মদনাই গ্রামে। আজ সংবাদ সম্মেলন করে আনোয়ার হোসেনের পরিবার।

আনোয়ারের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আঁখি বেগম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী আনোয়ার বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য। তিনি পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে একটি প্রকল্পে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। বিএনপির রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৪ ডিসেম্বর পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে সেখানে বিকেল পাঁচটার দিকে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন তাঁকে তুলে নেন। এরপর দুপচাঁচিয়া সদরে নিয়ে এসে তাঁর ফোনে দেলোয়ার নামের আরেকজনকে ডেকে এনে তুলে নেন। এর পর থেকে দুজনের কোনো হদিস মিলছে না।

আঁখি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী রাজনৈতিক হিংসা ও ক্ষোভের শিকার। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। তারপরও তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত দুই সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কে দিন পার করছি। এ ঘটনায় শেরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও তাঁর খোঁজে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই।’

আঁখি বেগম বলেন, ‘আমি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সংসারে ছোট দুটি সন্তান। তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। থানা-পুলিশ থেকে শুরু করে ডিবিতেও গেছি। কিন্তু কেউ আটকের কথা স্বীকার করছে না। সোমবার শেরপুর থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ প্রথমে নিতে রাজি হয়নি। কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে রাতে জিডি নেওয়া হয়।’

আনোয়ারের মা রোমেনা বেগম বলেন, ‘নিখোঁজের দিন রাত ৯টার দিকে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কয়েক সেকেন্ড কথা হয়। সে বলে, “আমাকে আটকে রেখেছে। আমি বগুড়াতেই আছি, টেনশন করো না।” তার পর থেকে ছেলের কোনো হদিস মিলছে না।’

আনোয়ারকে তুলে নেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে থাকা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে গেছিলাম। সেখানে হঠাৎ করে চারজন আনোয়ারকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যান। তাঁদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করার সুযোগটুকুও দেননি।’

এর আগে ডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিবি কাউকে তুলে নেয়নি। ডিবি আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করত।’ র‍্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন বলেন, ‘দেলোয়ার নামে কাউকে আমরা গ্রেপ্তার করিনি।’

আনোয়ার ও দেলোয়ারকে অবিলম্বে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তাঁদের নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে আওয়ামী সরকারকেই এর দায় নিতে হবে। বিএনপির নেতা-কর্মীকে ভয় পাইয়ে দিতে সরকার এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।