বিশেষ প্রতিনিধি: বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের দীর্ঘতম ডাবল লাইন রেলপথ রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে। প্রায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ রেলপথে রয়েছে সমান্তরালে দুটি মিটার গেজ লাইন। দুই লাইন হওয়ায় এ করিডোরে সহজ হয়েছে ট্রেন পরিচালনা। ট্রিপ বাড়ার পাশাপাশি কমেছে যাত্রার সময়। এখন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদীর মধ্যে ডাবল লাইন ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রেল। দৈর্ঘ্য ১৬০ কিলোমিটারের বেশি, যা হবে দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ডাবল লাইন রেলপথ।
রেলভবন সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনাধীন রেলপথটি বাস্তবায়নের পর সেটি দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে যাত্রীবাহী ট্রেন। আর পণ্যবাহী ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর—ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়াল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা। এ অর্থে রেলপথটির জন্য নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হবে। তাতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমীক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্পটির বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের পাশাপাশি সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় নিরূপণ করা হবে। সমীক্ষা প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মাঠপর্যায়ে কাজ শুরুর জন্য পরিকল্পিত ‘টাইম লাইন’ অনুযায়ী, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়াল গেজ ডাবল লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হবে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে। এ কাজ শেষ হওয়ার কথা পরবর্তী ৩০ মাসের মধ্যে বা ২০২৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধায় ফেলে সিঙ্গেল লাইনের রেলপথ। পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে ঈশ্বরদী—জয়দেবপুর সেকশনে ট্রেন চলাচল সবচেয়ে বেশি। সক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্রেন চলাচল করায় এ অংশে ট্রেন পরিচালনায় অতিরিক্ত সময় লাগছে। ডাবল লাইন হওয়ার পর সমস্যাটি আর থাকবে না। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জয়দেবপুর—ঈশ্বরদী সেকশনে বর্তমানে ২৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। ডাবল লাইন হলে প্রতিদিন ৭৪টি ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। এতে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনের পরিচালন সময় কমবে যথাক্রমে ৩০ ও ২০ শতাংশ। সর্বোপরি ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর—পশ্চিম ও দক্ষিণ—পশ্চিম অঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনগুলোর ভ্রমণ সময় কমে আসবে। বর্তমানে পণ্য পরিবহনে ভার বহন সীমাবদ্ধতা (এক্সেল লোড) দূর করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর ডাবল লাইনের রেলপথ।
জানা গেছে, ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে বাংলদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরে সব মিলিয়ে ৫৬ দশমিক শূন্য ৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
এখনো সমীক্ষা পর্যায়ে থাকলেও জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয় প্রায় পাঁচ বছর আগে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় হওয়া সমঝোতার আলোকে ঢাকার জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথের সমান্তরালে নতুন একটি ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ এ রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করার জন্য ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার, যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদারও নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে নানা জটিলতায় এ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় চীন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনও (সিসিইসিসি) চুক্তি বাতিল করে। চীনের সরে দাঁড়ানো এ প্রকল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে জাইকা।