প্রতীকী ছবি

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: বাংলাদেশের প্রাচীনতম বৃহৎ রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থাপনা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।

রাষ্ট্রের অধিক গুরুত্বপূর্ণ (কেপিআই) এই স্থাপনা তিনটি হলো পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লোকোশেড ইয়ার্ড ও জ্বালানি মজুতের দুটি ট্যাংক। এই তিনটি স্থাপনার কোনো একটির সামান্য ক্ষতি হলে ঢাকার সঙ্গে ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও খুলনার সরাসরি রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ঈশ্বরদী চৌকির হাবিলদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে লোকবল থাকার কথা, তার প্রায় অর্ধেকই নেই। লোকবলের সংকটের কারণে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের চৌকিতে কাউকে রাখা যাচ্ছে না। কেপিআইভুক্ত তিনটি স্থাপনার মধ্যে লোকোশেডে দিনে—রাতে তিনজন দায়িত্ব পালন করছেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী—খুলনা, রাজশাহী —গোপালগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে রাজবাড়ী হয়ে ঢাকা রেলপথের শতবর্ষ পুরনো ঐতিহ্যবাহী পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার অভাবে দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিরাপত্তা একেবারেই নেই। জংশন ইয়ার্ডের লোকোশেড এলাকার নিরাপত্তাও নড়বড়ে। এখানে ট্রেনচালকদের দায়িত্ব বণ্টন, ত্রুটিপূর্ণ রেলের ইঞ্জিন মেরামত করার পাশাপাশি উদ্ধারকারী একটি ট্রেন রয়েছে। এ ছাড়া রেলগাড়ির ইঞ্জিনের জ্বালানির গুরুত্বপূর্ণ দুটি ট্যাংক কিছুটা দূরে রয়েছে। এর মধ্যে একটি সরবরাহ (সার্ভিস) এবং অপরটি মজুত (রিজার্ভ) ট্যাংক। প্রতিটি ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ১২ লাখ ৪ হাজার ৬৯০ লিটার। এই দুটি ট্যাংক থেকে ঈশ্বরদী—ঢাকা, রাজশাহী—ঈশ্বরদী, ঈশ্বরদী—রহনপুর—চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চিলাহাটি—ঈশ্বরদী, পাবনা—রাজশাহী, খুলনা—ঈশ্বরদী—ঢাকা রেল রুটে চলাচলকারী আন্তনগর, মেইল, লোকাল, মালবাহী, তেলবাহী ও কনটেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। অথচ এই এলাকা পুরোপুরি নিরাপত্তাহীন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজতে বসানো রেললাইনের নিচের কাঠের স্লিপারের কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিক স্লিপারের অংশবিশেষ খসে পড়েছে। অনেক স্লিপারে নাটবলটু নেই। ‘সেতুর উপর দিয়ে চলাচল নিষেধ’ লেখা দুটি সাইনবোর্ড দুই প্রান্তে থাকলেও দিন—রাত মানুষ হেঁটে সেতু পার হচ্ছে। সেতুর পাশে একটি চৌকি থাকলেও কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই। এ ছাড়া লোকোশেড ও তেল মজুতাগার এলাকায় সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, ৫ হাজার ৮০০ ফুট দৈর্ঘ্যর এই ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন যাত্রী ও পণ্যবাহী প্রায় ২২টি বেশি ট্রেন চলাচল করে। হরতাল বা অন্য কোনো আন্দোলনের সময় নাশকতা রোধ করতে প্রকৌশল বিভাগ দিনে—রাতে সেতু পাহাড়ার ব্যবস্থা করে।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ (পাকশী) সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে কেপিআই নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও তা কার্যকর ছিল না। আগের নীতিমালায় কিছু সংশোধনী এনে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। সে অনুযায়ী রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) জংশন এলাকার লোকোশেড ও জ্বালানি মজুতাগার এবং রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) রেলপথের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।

ঈশ্বরদী রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন বলেন, ঈশ্বরদীর ফতেমোহাম্মদপুর লোকোশেড এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। শিগগিরই আরও লোকবল বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেপিআই এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

বারবার নাশকতা

চলমান হরতাল—অবরোধে ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বারবার নাশকতার ঘটনা ঘটছে। নভেম্বর মাস জুড়ে নশকতার চারটি ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৭ নভেম্বর থেমে থাকা একটি ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনটির কয়েকটি আসন পুড়ে যায়। রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলা সদরের ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

৫ নভেম্বর  সন্ধ্যায় রেলগেট এলাকায় রেললাইনে কাগজ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে থানা—পুলিশের একটি দল সেখানে হাজির হয়। পুলিশের গাড়িটি ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র গাড়িটি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ও দুটি গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ককটেল পুলিশের গাড়িতে লেগে গাড়ির কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে পুলিশ পাল্টা ধাওয়া দিলে উপস্থিত যুবকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা—কর্মী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।

২ নভেম্বর জংশন স্টেশন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে র‍্যাব-১২ সদস্যরা। রাতে ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মের পশ্চিমপাশে রাখা নতুন চায়না কোচের নিচে ককটেল সদৃশ একটি বোমা রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।   

১ নভেম্বর দুপুরে ঈশ্বরদী জংশন ও বাইপাস স্টেশনের মাঝামাঝি লোকোশেড এলাকায় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে যায়।