১৫১ বলে ১৬৯ রান সৌম্য সরকারের, যেটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ান কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ | এএফপি |
ক্রীড়া প্রতিবেদক: এক দলের এক ওপেনার করেছেন ১৬৯ রান, তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৪৫ রানের। প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের ৪ জনই আটকে গেছেন ১২ রানের আগেই, প্রথম ৪ উইকেটে ৫০ রানের কোনো জুটিই নেই। আরেক দলের কেউই শতক পাননি, তবে প্রথম ৩ ব্যাটসম্যান মিলেই করেছেন ২২৯ রান। নেলসনে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এভাবেই দলগত পারফরম্যান্সের কাছে ম্লান হয়ে গেছে ব্যক্তিগত অর্জন।
গত ম্যাচে শূন্য রানেই আউট হওয়া সৌম্য সরকার খেলেছেন স্মরণীয় এক ইনিংস, যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ান কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। এমন পারফরম্যান্সে সৌম্য হয়েছেন ম্যাচসেরাও। কিন্তু উইল ইয়াংয়ের ৮৯, হেনরি নিকোলসের ৯৫ রানে সেটি হয়ে থেকেছে সান্ত্বনা পুরস্কার হয়েই। স্যাক্সটন ওভালের দারুণ ব্যাটিং–সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য ৭ উইকেট ও ২২ বল বাকি রেখেই পেরিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। ১ ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার পথে নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে রেকর্ডটি ১৯-০-ও করেছে তারা।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ চাপে পড়ে ১০ ওভারের মধ্যেই। সে সময় ফেরেন এনামুল হক, নাজমুল হোসেন ও লিটন দাস। পেসাররা তেমন কোনো মুভমেন্ট পাননি, মাঝেমধ্যে বল একটু থেমে আসা ছাড়া উইকেটে আদতে কিছু ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের সময় দেননি খুব একটা। দশম ওভারে জ্যাকব ডাফির দ্বিতীয় শিকার হয়ে লিটন যখন থামলেন, তখন বাংলাদেশের ৪৪ রানের মধ্যে ২৮ রানই সৌম্যর। দিনে অন্যান্য বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সঙ্গে সৌম্যর পার্থক্য ফুটে উঠেছিল তখনই।
তাওহিদ হৃদয় অবশ্য ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন সৌম্যকে, কিন্তু নন–স্ট্রাইক প্রান্তে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে থামতে হয় তাঁকে। সৌম্যর ড্রাইভ বোলার জশ ক্লার্কসনের বুট ছুঁয়ে ভাঙে নন–স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প, তখন ক্রিজের বাইরেই ছিলেন হৃদয়।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটি জুটি আসে পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটে। মুশফিকের সঙ্গে ৯১ রানের পর মিরাজকে নিয়ে সৌম্য তোলেন ৬১ রান। মুশফিকের সঙ্গে জুটির সময় ৫০ পেরিয়ে যান সৌম্য, দুজনই পেস ও স্পিনকে খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ডাফির ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ৪৫ রান করা মুশফিক খোঁচা দেওয়ার পর ভাঙে সে জুটি। এরপর ছন্দপতন হয় সৌম্যরও, তবে সে সময় ভাগ্যের সহায়তাও পান তিনি। ৫০ থেকে ৬০ রানের মধ্যে দুবার ক্যাচ দিয়েও বাঁচেন, একবার বাঁচেন রিভিউ নিয়ে।
নড়বড়ে সৌম্য বেশি দূর যাবেন, তখন ঠিক সেটি মনে হচ্ছিল না। ৯০ পেরিয়েও আরেকবার বাঁচেন তিনি। কিন্তু অশোকের বলের অফ সাইডে নেওয়া সিঙ্গেলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক পূর্ণ করার পরই বদলে যায় তাঁর খেলার ধরন। ১১৬ বলে শতক পূর্ণ করেছিলেন, পরের ৬৯ রান করেন মাত্র ৩৫ বলে। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৫৩ রানের পর তানজিম হাসান ও রিশাদ হোসেনকে নিয়ে ৩৩ বলে তোলেন আরও ৫৮ রান। শেষ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অবশ্য গুটিয়ে যায় ১ বল বাকি থাকতেই।
সৌম্যর অমন ইনিংসে বাংলাদেশ লড়াই করার মতো একটা সংগ্রহ পেয়েছিল বটে, তবে সেটিকে যথেষ্টর চেয়েও বেশ কম প্রমাণ করেছেন নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা। শুরুতে একটু সময় নিয়ে রাচিন রবীন্দ্র ও ইয়াং গড়েন ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি, বাংলাদেশও বলতে গেলে লড়াই থেকে ছিটকে যায় তখনই। ডিপ মিডউইকেটে রিশাদের দারুণ ক্যাচে ৪৫ রান করা রবীন্দ্র থাকলেও ইয়াং ও নিকোলসের ১২৮ রানের জুটি বাংলাদেশকে হতাশই করে গেছে। মুভমেন্ট না পেয়ে শর্ট বলের ওপর নির্ভর করছিলেন বাংলাদেশ পেসাররা, তবে সেসব হয়ে গেছে বুমেরাং।
ইয়াং ও নিলোকসের কেউই অবশ্য শেষ পর্যন্ত শতক পাননি। হাসান মাহমুদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে থামেন ইয়াং, নিকোলস মিডউইকেটে ধরা পড়েন শরীফুলের শর্ট বলে। তাতে অবশ্য নিউজিল্যান্ডের কিছু যায়–আসেনি, অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও টম ব্লান্ডেলের জুটিতে নিশ্চিত হয়েছে সহজ জয়।
আর তাতেই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডও হয়ে গেছে সৌম্যর। ওয়ানডে ইতিহাসে তাঁর
১৬৯ বা এর বেশি রানের ইনিংসের পরও হারের ঘটনা ছিল এর আগে ৭টি, যার মধ্যে
৪টি প্রথম ইনিংসে। সৌম্য ঢুকে গেছেন দুই তালিকাতেই। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর
যে পারফরম্যান্স, তাতে প্রত্যাশার সীমা অনেকটাই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু প্রত্যাশা মেটানোর ধারেকাছেও যেতে পারেননি তাঁর সতীর্থরা।