প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দ থেকে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেত্রীরা সেলাই মেশিন পেয়েছেন। একই বরাদ্দ থেকে ফ্যানও কেনা হয়েছে। রোববার তানোর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একটি ফ্যান উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতার হাতে তুলে দিয়ে বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
সেলাই মেশিন ও ফ্যান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। বরাদ্দপত্রে এই টাকা সংসদ সদস্যের পরামর্শ নিয়ে প্রকল্প তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তাঁর পরামর্শ নিয়েই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান। যেসব নারীনেত্রী সেলাই মেশিন পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তানোর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তানোর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার এবং উপজেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুমা বেগম।
অনুষ্ঠানের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)—এর আওতায় তানোর উপজেলার অসহায় দুস্থ মহিলাদের মধ্যে সেলাই মেশিন ও সিলিং ফ্যান বিতরণ’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-১ (তানোর গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ। বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তানোর উপজেলা প্রশাসন।
সেলাই মেশিন নেওয়ার বিষয়ে সোনিয়া সরদার বলেন, আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের তানোর উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ডের সভাপতি রয়েছেন ১৮৮ জন। সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন ১৮৮ জন। তাঁরা সবাই পাবেন। এর মধ্যে গত রোববার ১৮৮ জনকে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুমা বেগম বলেন, অনুষ্ঠানে যুব মহিলা লীগের যে মেশিন বিতরণ করা হয়েছে, তাঁরা পেয়েছেন। নিজেরটা পেয়েছেন কি না, বিশেষভাবে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমানকে ফ্যান দিয়ে বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। তবে উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ফ্যানগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাবে। প্রতিষ্ঠানের নামেই প্রকল্প করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতার হাতে ফ্যান তুলে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সে সময় ছিলেন না। বিষয়টি বলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা মিজানুর রহমান বলেন, যুবলীগের এক ভাইয়ের জন্য বরাদ্দ করা ফ্যানটি তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর (মিজানুর) হাতে তুলে দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে। যুবলীগের ওই ‘ভাইয়ের’ নাম জানতে চাইলে তিনি কিছুতেই নাম মনে করতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তানোর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, মিজানুর রহমান আগে তানোরের মুন্ডুমালা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে রাজশাহী জেলার কোনো কমিটি নেই। তানোরের কোনো ইউনিটের ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। মিজানুর রহমানের হাতে তুলে দিয়ে শুধু উদ্বোধনটা দেখানো হয়েছে। আর মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের মেশিন দেওয়া হলেও তাঁরা আসলে দুস্থ মানুষ। তাঁরা পাওয়ার যোগ্য। বিভিন্নভাবে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সেলাইয়ের কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুস্থ নারীদের মধ্যে এই সেলাই মেশিন বিতরণ করার কথা।
যে নারীদের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে, তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তানোর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফজলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন। তাই কাদের মেশিন দেওয়া হয়েছে, তিনি জানেন না। তাঁদের প্রশিক্ষণ রয়েছে কি না, তা–ও তিনি বলতে পারছেন না। তবে যাঁদের প্রশিক্ষণ রয়েছে, তাঁদেরই দেওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাঁর মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।