দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিনিধি: তফসিল ঘোষণার পর সংলাপের সময় কোথায়—এ প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

সিইসি জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণের মধ্য দিয়ে তফসিল ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি সংঘাত এড়িয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, ‘পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়।’

সিইসির এ বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন সামনে, তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এই সময়ে কবে আপনি বাংলাদেশের শতাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন? কবে নির্বাচন করবেন?’ যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আর সিইসির সংলাপের কথা এক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে বিএনপির তফসিল প্রত্যাখ্যান এবং হরতাল কর্মসূচি–সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘হরতাল এখন ভয়তাল হয়ে গেছে। এটা মরচে ধরা হাতিয়ার। যে ট্রেন ছেড়ে গেল, সে ট্রেন থামানোর কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। তবে সে ট্রেনে তারা না উঠলে আমরা কী করব? নির্বাচনী ট্রেন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। ট্রেন ছাড়লে তো আর থামে না। থেমে থাকবে না। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে, আমাদের এর বিকল্প কী করার আছে?’

জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসবে কি না বা কে কার সঙ্গে যাবে, এটা তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। জাতীয় পার্টি সম্পর্কে শেষ বিষয়টা শুনতে আরও সময় লাগবে। একটু অপেক্ষা করেন, ভেতরের অনেক খবর আছে।’

নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে, গণতন্ত্রকামী বাঙালির জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত আনন্দের একটি ঐতিহাসিক দিন। এর মধ্যে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি দেশের সব ভোটারকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভোট প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান।

তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল
তফসিলে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটের তারিখকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আনন্দমিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করতে মাগরিবের আজানের আগ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন সড়কে।

মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। সেখানে তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নানা স্লোগান দেন। 

তফসিল ঘোষণা করতে বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন সিইসি। তাঁর এ ভাষণ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মাইকে প্রচার করা হয়। তিনি যখনই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন, তখনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্বাগত জানিয়ে হর্ষধ্বনি দেন।

পরে প্রথমে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়। এরপর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য সংগঠন মিছিল করে। মিছিলগুলো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পীর ইয়ামেনী মার্কেট, জিরো পয়েন্ট হয়ে আবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিরপুর-১০ নম্বর, উত্তরা, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেন।'

শুক্রবার থেকে দলীয় ফরম বিক্রি
আগামী শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে আওয়ামী লীগ। এদিন ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে।

ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এ ব্রিফিং করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ১৭ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। সেখানেই মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পরপরই ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে।