রাজশাহীতে চিকিৎসকের খুনিরা অধরা, ক্ষুব্ধ ও হতাশ সহকর্মীরা

গোলাম কাজেম আলীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে চিকিৎসকেরা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে রোববার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর চিকিৎসক গোলাম কাজেম আলী আহমেদ হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পরও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকেরা। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে চিকিৎসকেরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে সমাবেশ করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) রাজশাহী শাখা এ কর্মসূচি পালন করেন। কাজেম আলী যৌন ও চর্মরোগবিশেষজ্ঞ ছিলেন। সমাবেশে রামেক হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান হাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ বড় বড় অপরাধীকে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে ফেলতে পারে, কিন্তু চিকিৎসক কাজেমের খুনিদের এক সপ্তাহেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এতে চিকিৎসক সমাজ উদ্বিগ্ন। তারা ভীতসন্ত্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত। চিকিৎসক সমাজ কাজ ফেলে মাঠে নামলে কিন্তু ভালো হবে না। তার আগেই খুনিদের ধরতে হবে।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ অক্টোবর রাত পৌনে ১২টার দিকে রোগনির্ণয় কেন্দ্রের চেম্বারে রোগী দেখা শেষ করে ফেরার পথে খুন হন কাজেম আলী। তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। শিক্ষকতা ছেড়ে দেওয়ার পর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে শুধু প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন।

কাজেম যেদিন খুন হন, সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নগরীর চন্দ্রিমা থানার কৃষ্টগঞ্জ বাজারের পল্লিচিকিৎসক এরশাদ আলীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টার দিকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে সিটিহাট এলাকায় তাঁর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। একই দিনে এ দুই চিকিৎসক খুনের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ কোনো তথ্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি।

রোববারের সমাবেশে বিএমএ রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি একজন অবেদনবিদ। অস্ত্রোপচারের জন্য রাতবিরাতে বাসা থেকে রিকশা নিয়েই চলে আসতাম। এখন আসি না। আমাদেরও প্রাণের ভয় আছে। এ অবস্থা তো চলতে পারে না। খুনিদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে আমাদের আতঙ্ক কাটবে না। এর প্রভাব পড়বে রোগীদের ওপর।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) রাজশাহীর সভাপতি চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। রাষ্ট্রের অনেক টাকাও খরচ হয়। এই মেধাবী চিকিৎসক রাষ্ট্রের সম্পদ। তাই তাঁদের এভাবে মেরে ফেলাটা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ। এটা যেন আর না হয়। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা এই রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বিএমএ রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক নওশাদ আলী। তিনি বলেন, কাজেম যে দলেরই সমর্থক হন না কেন, তিনি একজন চিকিৎসক। তাঁকে হত্যা করা চিকিৎসক সমাজ মেনে নেয়নি। হত্যাকারী যে-ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এবার সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করবেন। দ্রুতই খুনিরা গ্রেপ্তার না হলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখা কিংবা আরও বেশি সময় ধরে কর্মবিরতি পালন করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিএমএ রাজশাহীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ আসিফ ইকবাল, কোষাধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আহমেদ মাসিয়া জামিল অরূপ, রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান হাসান তারিক, যৌন ও চর্মরোগ বিভাগের প্রধান নজরুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনায় ছিলেন অঙ্কুর স্যানাল।

রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, দুটি খুনের ঘটনাই পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে খুনিরা ধরা পড়বে।