জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির সাবেক নেতারা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন তিনি।

সরকার চাপ দিয়ে বিএনপির সাবেক নেতাদের নির্বাচনে আনছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে চাপের কোনো প্রশ্নই আসে না। এঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে আসছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির সাবেক নেতারা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যাঁরা দল ছেড়েছেন, সবাই বিএনপির বিশিষ্ট নেতা, তাঁরাই ভাগ হচ্ছেন। এখানে কাউকে জোর করতে হয়নি, তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটি যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, তাঁদের মনঃপূত হচ্ছে না। তাঁরা নির্বাচনমুখী, সে জন্যই তাঁরা নির্বাচনে চলে আসছেন। তাঁরা তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশের বাইরে চলে আসছেন।

যাঁরা আসছেন, তাঁদেরকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দল থেকে তাঁদের জোর করার কিংবা আহ্বান জানানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।’

এভাবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘যদি কেউ ইচ্ছা করে না আসে, তাহলে কি কাউকে জোর করে আনা যাবে? যাঁরা মনে করছেন বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে, বাংলাদেশ যেভাবে চলছে সে অনুযায়ী একটা নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল হতে হবে, তাঁরাই আসছেন। যাঁরা মনে করছেন তাঁরা জোর করে আসবেন, গাড়ি ভাঙচুর করবেন, জ্বালাও–পোড়াও করবেন, মানুষ হত্যা করবেন, তাঁদের কথা আলাদা। তাঁরা আলাদাই রয়ে গেছেন। যাঁরা এগুলো চান না, তাঁরা কিন্তু ইতিমধ্যে চলে আসছেন। ছোট দল বড় দল, সবই একাকার হচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অনেক নেতার জামিন না হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের দিকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সরকারের কোনো প্রভাব সেখানে নেই। কেইস টু কেইস দেখে তাঁরা জামিন দিচ্ছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এখানে কোনো কিছুতে প্রভাবিত হয়ে বিচারকেরা সিদ্ধান্ত দেননি। আমাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নয় এটা।’

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর সারা দেশে মামলার সঙ্গে গ্রেপ্তারের সংখ্যাও কমেছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগে সারা দেশে প্রতিদিন দুই হাজারের কাছাকাছি ব্যক্তি বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হতেন, কারাগারে যেতেন। আবার দুই হাজারের কাছাকাছি ব্যক্তি মুক্তি পেতেন। আর ২৮ অক্টোবরের পরে এ সংখ্যা কমে আসছে। এখন গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৮১৬ জন ব্যক্তি জেলে যাচ্ছেন।

২৮ অক্টোবরের আগে ও পরে হওয়া মামলার পরিসংখ্যানও দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগে সারা দেশে প্রতিদিন ৫৬৫টি মামলা হতো। আর ২৮ অক্টোবরের পরে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ৪৩৮টি মামলা হয়েছে। ১২৭টির মতো মামলা কমেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির অভিযোগ নাকচ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে বলছে রাজনৈতিক মামলায় যাকে পাচ্ছি বিএনপির নেতাদের ধরছি, মামলা করছি, এটা কিন্তু সঠিক নয়।’

বৈঠকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা, কূটনীতিকসহ অন্যান্য বিদেশি যাঁরা বাংলাদেশে থাকেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চান গোয়েন লুইস।

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের নিরাপত্তা দেওয়াই তাঁদের কাজ। পাশাপাশি বিদেশি যাঁরা আছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়েই ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন তাঁরা। তবে জাতিসংঘ যদি মনে করে তাদের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে, তাহলে তা বিবেচনা করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী সব সময় সজাগ থাকবে, যাতে কেউ কোনো রকম নাশকতা কিংবা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে। বিদেশি কূটনীতিকেরা মুক্তভাবে যেখানেই যেতে চান, যেতে পারেন। সহযোগিতার দরকার মনে করলে আমরা করব।’