মির্জা আব্বাসকে বুধবার বেলা দেড়টার দিকে ঢাকার আদালতে নেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত সাত দিনে বিএনপির ৪ হাজার ২৮৩ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহাসমাবেশের দিন থেকে গত চার দিনে দলটির ৩ হাজার ৪৩৬ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত এবং একজন সাংবাদিকসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন।
আজ বুধবার বিকেলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেপ্তার দলটির সব নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধের দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার পর্যন্ত বিএনপির ২ হাজার ৫৬৩ জনের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার, ৫৫টির বেশি মামলা, ৩ হাজার ৪৩৬ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত এবং একজন সাংবাদিকসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ৭ দিনে ৪ হাজার ২৮৩ জনের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এবং ৮০টির বেশি মামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ৫ হাজার ৭২৯ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত, ৪৭৩টি মামলা, ৬ হাজার ৯৭৩ জনকে গ্রেপ্তার ও ৩৫ হাজার ৬২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৭টি মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ১১১ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের সমালোচনা করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নানা ফন্দি করে আবারও ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে চান। তিনি রাজনৈতিক সমঝোতা ও সম্প্রীতি এবং অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী নন।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে মানুষের উপস্থিতিকে প্রধানমন্ত্রী ভালো চোখে দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ জন্য তাঁর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সাংবাদিকসহ বিএনপি নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। সমাবেশ পণ্ড করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি তাঁর আস্থা আরও বেড়েছে। এ কারণে এই বাহিনী আরও বেপরোয়া ও নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে।
অসুস্থ নেতাদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে
কারাগারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতা একসময় মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ছিলেন, তাঁদেরও ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না। কারাগারে তাঁদের নেতাদের আটকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনের বেলায়ও তাঁদের সেলের ভেতরে আটক রাখা হয়। ভয়ংকর হয়রানির মধ্যে তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন।
সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরও কারাফটক থেকে এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এটা তাঁর ওপর সরাসরি সরকারি নিপীড়ন। কারাগারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর কারা কর্তৃপক্ষের নিপীড়ন ও নির্যাতনের নিন্দাও জানিয়েছে দলটি।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিয়ালের মতো আক্রমণ’
রিজভী দাবি করেন, ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর পুলিশ ‘রক্তের হোলি’ খেলেছে। দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সংস্থাগুলো সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল।
সরকার সারা দেশকে গোরস্তান বানিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায় অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের আওয়াজকে নিস্তব্ধ করতে নিজেদের মনের মতো করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাজিয়েছে। তারই প্রতিফলন বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত লাঠিয়ালের মতো তাদের আক্রমণ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বিরোধী দলের পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকেও রক্তাক্ত পন্থায় দমন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। অসাধু পণ্য সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। এই সিন্ডিকেটের সবাই আওয়ামী লীগের লোক।