মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে ডাউনিং স্ট্রিটে ডেভিড ক্যামেরন। ১৪ নভেম্বর, লন্ডন | ছবি: রয়টার্স |
সাইদুল ইসলাম, লন্ডন থেকে: ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) ঘিরে ব্রিটিশ রাজনীতিতে যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। সোমবার ঘুম থেকে উঠে ব্রিটিশরা রাজনীতিতে আবার নতুন এক চমক দেখলেন সাত বছর আগে ডাউনিং স্ট্রিট ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আবারও রাজনীতিতে ফেরার মধ্য দিয়ে। ১৯৭০ সালের পর প্রথম কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি ও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরলেন।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মন্ত্রিসভায় বড় পরিবর্তন আসছে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ফেরাটা ছিল অপ্রত্যাশিত ও চমকপ্রদ। সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের ফলে তাঁকে বরখাস্ত করতে ঋষি সুনাকের ওপর চাপ ক্রমে বাড়ছিল। বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে গত শনিবার লন্ডনে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নগর পুলিশের সমালোচনা করার পর থেকে।
বিরোধী দল লেবার পার্টি, সংবাদমাধ্যম ও নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের সমালোচনার মুখে ঋষি সুনাক বাধ্য হন নিজের অন্যতম বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন সহকর্মী ব্রেভারম্যানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করতে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলিকে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়ে আসেন তাঁর এক সময়ের নেতা ডেভিড ক্যামেরনকে। ব্রিটিশ রাজনীতির এই উত্থান–পতন ও নতুন মেরুকরণ আবারও প্রমাণ করল রাজনীতিতে আসলেও শেষ বলে কিছু নেই।
২০০১ সালে কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়নে অক্সফোর্ডের উইটনি আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ডেভিড ক্যামেরন। তখন বিরোধী দলে থাকা কনজারভেটিভ পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে ছিলেন ক্যামেরন।
২০১০ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও জোট সরকার গঠন করে। এ সরকারে প্রধানমন্ত্রী হন ক্যামেরন। ২০১৩ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে আয়োজিত গণভোটের ফল অনুকূলে আসায় তিনি আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপরে ২০১৫ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৬ সালের গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে জনরায় আসায় ক্যামেরন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। গণভোট শেষের পরে ২০১৬ সালে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ছয় বছর দেশকে নেতৃত্ব দেন ডেভিড ক্যামেরন।
ক্যামেরনের পদত্যাগের পর গত সাত বছরে থেরেসা মে, বরিস জনসন, লিজ ট্রাস ও বর্তমানে ঋষি সুনাকসহ অন্তত চারজন প্রধানমন্ত্রীর শাসন পেয়েছে যুক্তরাজ্য। অনেকে কৌতুক করে এখন বলেন, ঋতু বদলানোর মতো যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী বদলায়।
এমন সময়ে ক্যামেরন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা চলছে। সময়টা চ্যালেঞ্জিং হলেও ক্যামেরন তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
ঋষি সুনাকের দাবি, যেকোনো সময়ের তুলনায় তাঁর বর্তমান মন্ত্রিসভা অনেক বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। যদিও ক্যামেরনের ফিরে আসায় তাঁর দলের ডানপন্থী এমপিদের মধ্যেই অসন্তোষ আছে।