অস্ত্র উঁচিয়ে কিশোরদের উল্লাসের ভিডিও ছড়ানোর পর সাতজন গ্রেপ্তার

রাজশাহীতে অস্ত্র নিয়ে নাচানাচি করা গ্যাংয়ের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে তাঁদের সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: বাজনার তালে তালে অস্ত্র উঁচিয়ে নাচানাচি করছে একদল কিশোর—রাজশাহীর এমন একটি ভিডিও গতকাল মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অস্ত্র হাতে উল্লাসের ভিডিওটি নগরের শাহ মখদুম থানার গাংপাড়া এলাকার। রাজশাহীতে একের পর এক ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মধ্যে ওই ভিডিও ছড়ানোর পর গতকাল দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে ‘গ্যাংয়ের’ সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্যাংয়ের গ্রেপ্তার সদস্যরা হলেন সোহেল রানা (২১), মনিরুল ইসলাম (২২), রফিকুল ইসলাম (২১) নাজমুস সাকিব (২১), মোহাইমিনুল (২০), জিসাদ (২০) ও মারুফ হোসেন (২১)। তাঁদের সবার বাড়ি নগরের শাহ মখদুম থানার বড়বনগ্রাম এলাকার দুরুলের মোড়ে।

 রাজশাহীর কিশোর গ্যাং-এর অস্ত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে  | কোলাজ: ভিডিও থেকে নেওয়া 

ওই গ্যাংয়ের অন্তর্দ্বন্দ্বে আরাফাত (১৭) নামের এক কিশোরকে গত ২৭ অক্টোবর মারধর করা হয়। আরাফাত এখন গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। আরাফাতকে মারধরের কারণে তার পক্ষের কেউ হয়তো ভিডিওটি ছড়িয়ে দিয়েছে। আরাফাতের অভিভাবক গত সোমবার থানায় মামলা করেন। কিন্তু তিনি কারও নাম জানাতে পারেননি। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশের সন্দেহ, আরাফাতের ওপর হামলাকারী গ্রেপ্তার তরুণদের মধ্যে থাকতে পারে।

গুরুতর আহত আরাফাত হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, হাসপাতালে আনার পরপরই আরাফাতকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন অক্সিজেন লাগছে না। আজ বিকেলে তাকে ওয়ার্ডে আনা হয়েছে। তবে তার জ্ঞান ফেরেনি।

নগরের শাহ মখদুম জোনের উপকমিশনার নূর আলম আজ বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার গ্যাংয়ের সদস্যদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করেন এবং তাঁদের পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি চার-পাঁচ মাস আগের। হয়তো কিছু খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করার জন্য তাঁরা অস্ত্র নিয়ে ভিডিও করেছিলেন। তাঁরা সংখ্যায় সম্ভবত ১১ অথবা ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাং গ্রুপের একজন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গ্রেপ্তার মনিরুল ইসলামের মা ও খালা থানার আঙিনায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। তাঁর খালার দাবি, মনিরুল বাংলাদেশ পলিটেকনিকে পড়েন। যে ভিডিওটি ছড়িয়েছে, সেখানে মনিরুল নেই। এরপরও পুলিশ তাঁদের ‘ভালো ছেলেকে’ ধরে এনেছে। এ ব্যাপারে উপকমিশনার নূর আলম বলেন, ভিডিওতে দেখা না গেলেও ওই তরুণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তিনি গ্যাংয়ের সদস্য, সেটা স্বীকার করেছেন।

তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এর আগের পুলিশ কমিশনার নগরের কিশোর গ্যাংয়ের তথ্যভান্ডার তৈরি করেছিলেন। তাঁদের অভিভাবকদের ডেকে বুঝিয়েছিলেন। আজ গ্রেপ্তার তরুণদের নাম তথ্যভান্ডারে আছে কি না, নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ। তারা বলছে, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় সব তথ্য আছে। তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর এ ব্যাপারে বলা যাবে।

এদিকে গত ২৯ অক্টোবর রাতে দুই চিকিৎসক খুন ও ছিনতাইকারীদের হাতে গুরুতর আহত দুই ছাত্রের মামলার কোনো আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, মামলার আসামিদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।