সাকিব আল হাসান | ফাইল ছবি |
প্রতিনিধি মাগুরা: মাগুরায় রাজনীতির মাঠে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শনিবার তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার পর থেকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাগুরার আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সাকিবকে তাঁরা কখনো স্থানীয় রাজনীতি বা এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে দেখেননি। তবে মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই শেষ কথা।
সাকিব আল হাসান রাজনীতিতে নামতে পারেন—এমন গুঞ্জন গত সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই ছিল। ২০১৮ সালে তিনি মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার আগ্রহ দেখিয়েও শেষ মুহূর্তে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এবার তিনি তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। সাকিবের পক্ষে তাঁর একজন প্রতিনিধি গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মাগুরা-১, মাগুরা-২ ও ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
সাকিবের এক আত্মীয় বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। সাকিব দেশের বাইরে আছেন। দেশে ফিরে তিনি মনোনয়ন ফরম জমা দেবেন।’
মাগুরায় সাকিব আল হাসানের বাড়ি শহরের সাহাপাড়ায়। এটি মাগুরা-১ আসনের মধ্যে। সদর উপজেলার একটি পৌরসভা, নয়টি ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। এই আসনের আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বেশির ভাগই বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই নেতাদের কাছে সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান রোববার বলেন, ‘সে যে মনোনয়ন ফরম কিনছে, এটা আমি, আমার সভাপতি বা দলের কেউ জানে বলে আমার মনে হয় না। আমি ৩৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সময়ে আমি কখনো সাকিব বা তার পরিবারের কাউকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখিনি। তাদের এই দলের প্রতি কোনো কন্ট্রিবিউশন (অবদান) আছে বলেও মনে হয় না।’
একই ধরনের বক্তব্য শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমাউনূর রশীদ মুহিতের। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় তাঁর (সাকিব আল হাসান) আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও নেই। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।’
সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসনের জন্যও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাকিব। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। আলোচনা চলছে সেখানেও। জানতে চাইলে শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যামল কুমার দে বলেন, ‘নমিনেশনের (মনোনয়ন) ব্যাপারটা তো নেত্রীর হাতে। নেত্রী যাঁকে দেবেন, তাঁকে নিয়েই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। অন্য জায়গার কথা তো বলতে পারব না, এই শালিখা উপজেলায় রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে বা কারও সঙ্গে তাঁর (সাকিব আল হাসান) কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার জানা নেই। তবু আকাশ থেকে কোনো তারা এনে যদি এখানে দিয়ে ফেলে, আমরা তা–ই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ব। কোনো অসুবিধা নেই।’
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরার দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বর্তমান সংসদ সদস্যদের ওপর ক্ষুব্ধ। তাঁরা যাঁর যাঁর জায়গা থেকে প্রার্থীর পরিবর্তন চাইছেন। তবে তাঁরা কেউ এখনই সাকিবের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিচ্ছেন না। তাঁরা মনে করছেন, সাকিব মাগুরার যেকোনো একটি আসনে নৌকার প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বিপুল সমর্থন পাবেন।
শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া বলেন, ‘সাকিবের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন তারকা প্রার্থী হলে তো ভালোই হবে। সবাই তো আর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকেন না। নেত্রী যদি চান, এখানে তো কোনো সমস্যা দেখি না। কারণ, এখানে প্রার্থী পরিবর্তন হলে ভোটের ফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে।’
সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ফ ম আবদুল সত্তাহ বলেন, ‘মনোনয়ন যে কেউ কিনতেই পারেন। কিন্তু আমরা মনে করি, দলের জন্য যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নিবেদিতভাবে কাজ করেছেন, ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যাঁদের অবস্থান, এমন মানুষকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। সে (সাকিব আল হাসান) কখনো জনগণের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছে বা কোনো দলের রাজনীতি করেছে বলে তো শুনিনি। নেত্রী ভালো বুঝবেন কাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হয়, তাঁর কাছে সব তথ্যই আছে।’