আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দলের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে | ছবি: বাসস |
বিশেষ প্রতিনিধি: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, বাদ পড়ছেন কারা, তা প্রকাশ করেনি দলটি। আগামী শনিবার সারা দেশের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হলে একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই দুই বিভাগে বর্তমানে আওয়ামী লীগের ৫৯ জন সংসদ সদস্য আছেন, এর মধ্যে অন্তত ১০ জন বাদ পড়তে পারেন।
দলটির মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের প্রথম বৈঠকে দুই বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বোর্ডের বৈঠক হয় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শুক্রবার সকালে বোর্ডের মুলতবি সভা আবারও বসবে। এই বৈঠকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সময় পেলে অন্য আরেকটি বিভাগের প্রার্থী বাছাই করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বর্তমান একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের ৫৯ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। বাকি ১৩টির মধ্যে ১০টি আসনে জাতীয় পার্টি, একটি করে আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন।
সংসদীয় বোর্ড ও আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এখন ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে, এটা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ১৪-দলীয় জোটের শরিক ও মিত্রদের যেসব আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, সেগুলো থেকে পরে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
সূত্র আরও জানায়, মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুটি জরিপ গুরুত্ব দিয়েছেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন উপায়ে এসব জরিপ করিয়েছেন। যেসব মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের ব্যাপারে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তৃণমূলে কোন্দলে জড়ানোর তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাঁদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক শেষ এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, কারা মনোনয়ন পাবেন, তাঁদের নাম ২৫ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে। গতকাল রংপুর বিভাগের ৩৩ ও রাজশাহীর ৩৯টি মিলিয়ে মোট ৭২টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ফল প্রকাশ করব না। একসঙ্গে আমাদের মনোনয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চার দিনে ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ৩০০টি আসনের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ আবেদন থেকে টানা বৈঠক করে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে বাদ যাওয়া না–যাওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে রাজনীতিকের বাইরে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য কয়জন বাদ পড়ছেন, এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না, তবে বাদ পড়েছে।’ প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে করণীয় সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহ করে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জোট হবে বিভিন্নভাবে, কার সঙ্গে কার জোট হবে, কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল। জোট হতেও পারে নির্বাচনের আগে, সময় আছে। কাজেই তালিকাও আসতে পারে। এমন হতে পারে আপনিও ভাবছেন না, আমিও ভাবছি না। কিন্তু কার সঙ্গে কার জোট হয়, কেউ ভাবতে পারে না।’
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর; বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তফসিল পুনর্গঠনের সম্ভাবনা আছে। শেষ মুহূর্তে কোনো দল ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপি ভোটে অংশ নেবে না—এমনটা বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য দল ও ব্যক্তিদের বেশি সংখ্যায় ভোটের আনার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন দলটি। এ জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়তে পারে। তবে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ।