নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনার ঈশ্বরদীতে রেললাইনে আগুন, একটি ট্রাক ও মাইক্রোবাসে ভাঙচুর করেছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ সময় একটার পর একটা ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। এর আঘাতে পুলিশের গাড়ির কাচ ভেঙে গেছে। এ সময় দুটি গুলির আওয়াজও শোনা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষেরা। তবে পুলিশ গুলির ঘটনা স্বীকার করেনি।

বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কয়েকজন যুবক ব্যানার নিয়ে রেলগেট এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেন। এসময় তারা রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর ওই যুবকরা একটি ট্রাক ও মাইক্রোবাসের গ্লাস ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে থানা-পুলিশের একটি দল সেখানে হাজির হয়। এ সময় একটি ককটেল পুলিশের গাড়িতে লেগে গাড়ির কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘটনা জানতে পেরে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ইছাহক আলি মালিথার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহরের প্রতিরোধ মিছিল গড়ে তোলে। এরপর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল, যুবলীগ নেতা মিলন চৌধুরী ও এমপি পুত্র তৌহিদুজ্জামান দোলন বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুরো শহরে শান্তি মিছিল বের করলে শহরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে এর কিছুক্ষণ পরেই উপজেলা সড়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর ব্যাক্তিগত অফিস ও পশ্চিম টেংরি কাচারী পাড়া এলাকায় উপজেলা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মেহেদী হাসানের ব্যাক্তিগত অফিস ভাঙচুর করেন।

রোববার দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঘটনার পর থেকে ঈশ্বরদী উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। র‍্যাব, পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবির টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) টিএম রাহসিন কবির প্রমুখ।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। রেললাইনে আগুন সঙ্গে সঙ্গে নিভিয়ে ফেলা হয়। পুলিশ যাওয়ার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 রেলগেট এলাকায় অবস্থান নিয়েছে র‍্যাব | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুটি মিছিল দুই দিক থেকে আসছিল। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি মাঝখানে পড়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়িটির ওপর হামলা চালান। এতে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে গেছে। গাড়িটিতে একটি ককটেলের আঘাতও লেগেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এর আগে গত বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরের লোকশেড এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভোরে ট্রেনটি কলকাতা থেকে ঢাকার দিকে যাত্রা করে। দুপুর ১২টার দিকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে পৌঁছায়। যাত্রাবিরতি শেষে জংশন স্টেশন থেকে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই লোকশেড এলাকায় ট্রেনটি লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ককটেল ও পেট্রলবোমা ছোড়ে। এতে ট্রেনের জানালার কাচ ফেটে যায়। ট্রেনের যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তবে চালক দ্রুত ট্রেন চালিয়ে বাইপাস স্টেশন ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে চলে যান। ঘটনার পর স্টেশনে বিজিবি মোতায়েনসহ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এর মধ্যেই শুক্রবার সকালে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে একটি বোমা পাওয়া যায়। র‍্যাব বোমাটি উদ্ধার করে ধ্বংস করে।

পাবনার ঈশ্বরদী রেলগেট এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় রেললাইনে কাগজ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করা হয়। তবে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন